রোববার (৪ মে) দুপুরে উপজেলা চত্বরে ফসলের ক্ষতিপূরণসহ ইটভাটা মালিককে গ্রেফতার এবং ভাটা উচ্ছেদের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
জানা যায়, উপজেলার অন্নদানগর ইউনিয়নের বামন সর্দার গ্রামের এমএসবি ব্রিকস নামের ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ৮০ জন কৃষকের ৪১ একর জমির ধানের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ নিয়ে কৃষকরা রংপুর জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। টনক নড়ে প্রশাসনের।
আরও পড়ুন: ঝালকাঠিতে ইটভাটাকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
এরপর গত বুধবার (২৯ এপ্রিল) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ইটভাটা মালিক, কৃষি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা কয়েক দফা বৈঠক করেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ্য এলাকা পরিদর্শন করে ৮০ জন কৃষকের ৪১ একর জমির ক্ষতি নির্ধারণ করেন। কয়েকদফা বৈঠকের পর শতক প্রতি ৫০০ টাকা হারে ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে উপজেলা প্রশাসন। এসময় মালিক পক্ষ এ টাকা দিতে সম্মত হন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার থেকে দুই দফায় ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। ফলে আজ দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতিপূরণ ও ইটাভাটা মালিককে গ্রেফতারনহ ইট ভাটা উচ্ছেদের দাবিতে উপজেলা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করে।
এসময় তারা প্রশাসনের তালবাহনা মানি না, মানবো না, ভাটা মালিককে গ্রেফতার কর, করতে হবে, অবৈধ ভাটা উচ্ছেদ কর, করতে হবে, এ ধরনের নানা স্লোগান দিতে থাকে।
কৃষকরা বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে এই ইটভাটার কারণে তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। চলতি বছর ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ার কারনে বোরো ধানে কোনো ফলন নেই। সব ক্ষেত চিটায় ভরে গেছে। এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিলেন তারা। সবশেষ সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে দিলেও তা নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছে ভাটা মালিক।’
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁও / ঠিকাদার ইটভাটা মালিক: নিম্নমানের ইটে হচ্ছে সড়ক নির্মাণ, ক্ষোভ স্থানীয়দের
ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘ভাটা মালিক, ইউএনও, কৃষি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা কয়েক দফা বৈঠক করে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে একমত হন। কিন্তু ভাটা মালিক কারো কথা মানছেন না। ক্ষতিপূরণ দিতে গড়িমসি করছেন।’
এসময় দ্রুত ক্ষতিপূরণ নানদিলে অবিলম্বে ইটভাটা উচ্ছেদসহ ভাটা মালিকের গ্রেফতারের দাবি জানান তারা।
এদিকে ওই ইটভাটার মালিক মমিনুল ইসলাম বলেন, অনেক জমি তেমন ক্ষতি হয়নি। তাই পুনরায় জমিগুলো ঘুরে তালিকা নির্ধারন করলে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর মালিক পক্ষ এবং কৃষি বিশেষজ্ঞদের সাথে নিয়ে দুদিন ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ ঘুরে ঘুরে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। তারপরও তিনি কেন টাকা দিতে গড়িমসি করছেন বুঝি না। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে ৪ ইটভাটাকে ২৪ লাখ টাকা জরিমানা
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক সুমন বলেন, ইটভাটার কারণে ৮০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকরা অভিযোগ দেয়ার পর সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈঠক করা হয়। বৈঠকে কৃষকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ভাটা মালিক মেনে নিলেও এখন পুনরায় ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে আবেদন করছেন। দু-এক দিনের মধ্যে এর সমাধান না হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।