ইউক্রেন যুদ্ধ: চীন কি রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করতে সেনা পাঠাচ্ছে?

১ সপ্তাহে আগে
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দাবি করেন, ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলে দুই চীনা সেনাকে আটক করেছে তার সেনাবাহিনী। ওই দুই সেনা রুশ বাহিনীর পাশাপাশি লড়াই করছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

জেলেনস্কি সুর চড়িয়ে বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান, এটা (চীনা সেনা আটক) তার স্পষ্ট আলামত। পুতিনের এমন পদক্ষেপ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় চলমান শান্তি আলোচনার জন্য হুমকিস্বরূপ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

 

গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাত চলছে। তবে এবাই প্রথম সেখানে চীনা সেনা উপস্থিতির খবর এলো। যার প্রেক্ষিতে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এই ঘটনা শান্তি প্রতিষ্ঠায় বেইজিংয়ের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

 

চীন দীর্ঘদিন ধরে জোর দিয়েই বলে আসছে যে, তারা এই যুদ্ধে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে এবং একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকরে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। যদিও সংঘাতকালে রাশিয়ার সাথে বেইজিংয়ের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে।

 

আরও পড়ুন: রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলে দাবানল, জ্বলছে ৫ হাজার একর বনভূমি

 

বেইজিং এখন পর্যন্ত যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য রাশিয়ার কাছে অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো থেকে বিরত রয়েছে। তবে একই সাথে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অভূতপূর্ব ঢেউয়ের কবলে পড়া রাশিয়ার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কর্তৃপক্ষ।

 

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বেইজিং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে এখন তার নীতি বদলাচ্ছে এবং রাশিয়ার জন্য জনবল সহায়তার পাশাপাশি যুদ্ধে আরও সরাসরি জড়িয়ে পড়ছে?

 

চীনা সেনা আটক নিয়ে ইউক্রেন যা বলেছে

 

গত কয়েক বছর ধরে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করেছে রাশিয়া। উভয় দেশ একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং পিয়ংইয়ং ইউক্রেনে মস্কোর সেনাদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য সেনা পাঠিয়েছে।

 

তবে এবারই প্রথম যুদ্ধের ময়দানে চীনা সেনার উপস্থিতির দাবি করলো ইউক্রেন। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলে দুই চীনা সেনাকে আটক করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে পরিচয়পত্র, ব্যাংক কার্ড ও ব্যক্তিগত তথ্য পাওয়া গেছে।

 

পোস্টটির সাথে একটি ভিডিও ফুটেজও যোগ করা হয় যেখানে কথিত চীনা বন্দিদের মধ্যে একজনকে হাতকড়া পরা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। এছাড়া তাকে চীনের ম্যান্ডারিন ভাষায় কথা বলতে এবং দৃশ্যত সাম্প্রতিক যুদ্ধের বর্ণনা করতেও দেখা যাচ্ছে।

 

জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে যে, দখলদারদের (রুশ বাহিনীর) ইউনিটে এই দুজনের চেয়ে আরও অনেক বেশি চীনা নাগরিক রয়েছেন।’ জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘ইউরোপের এই যুদ্ধে চীন এবং অন্যান্য দেশের সাথে রাশিয়ার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, পুতিন যুদ্ধ বন্ধ না করে অন্য কিছু করতে চান।’ 

 

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে বলেও জানান জেলেনস্কি। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

 

এ বিষয়ে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেন, ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে চীনা সেনাদের যুদ্ধ ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চীনের ঘোষিত অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।’ কিয়েভে চীনা রাষ্ট্রদূতকে বিষয়টি ব্যাখ্যার জন্য তলব করা হয়েছে বলেও জানান ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

 

যুক্তরাষ্ট্র যা বলেছে

 

দুই চীনা নাগরিক আটকের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানান মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস। তিনি এই ঘটনাকে ‘বিরক্তিকর’ বলে অভিহিত করেন। বলেন, রাশিয়া যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে চীন তার “প্রধান সহায়ক”। এছাড়া তিনি ন্যাভিগেশন সরঞ্জাম, সেমিকন্ডাক্টর চিপ এবং জেট যন্ত্রাংশের মতো দ্বৈত-ব্যবহারের পণ্যও চীন থেকে রাশিয়ায় সরবরাহের কথা উল্লেখ করেছেন।

 

প্রতিক্রিয়ায় কী বলেছে চীন?

 

ইউক্রেন যুদ্ধে বেশ কয়েকজন চীনা নাগরিক অংশ নিচ্ছে- জেলেনস্কির এমন দাবি উড়িয়ে দিয়েছে চীন। বুধবার (৯ এপ্রিল) বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘এই দাবির কোনো ভিত্তি নেই। আসলে ইউক্রেন সম্পর্কে চীনের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। ইউক্রেনীয় পক্ষকে সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য চীনের প্রচেষ্টা এবং গঠনমূলক ভূমিকাকে সঠিকভাবে দেখা প্রয়োজন।’

 

ইউক্রেনে চীনা সেনার লড়াইয়ের আরও খবর

 

এর আগে সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলা হয়েছে যে, চীনা ভাড়াটে সেনারা ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে। ফরাসি সংবাদমাধ্যম লে মন্ডে গত ৬ এপ্রিল এক রিপোর্টে জানায়, তারা ৪০ জন চীনা ব্যক্তির সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করেছে যারা রাশিয়ান বাহিনীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলে দাবি করেছে।

 

এই সংবাদমাধ্যমটি ৩৭ বছর বয়সি এক চীনা ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছে যিনি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিদেশি ভাড়াটে সেনা হিসেবে যুদ্ধে যোগ দেন এবং তারপর চীনে ফিরে আসেন।

 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউজউইক ম্যাগাজিন জানিয়েছে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে সোশ্যাল মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল যে, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ায় দুই চীনা ভাড়াটে সেনাকে হত্যা করেছে। তবে এমন দাবির পক্ষে প্রমাণ নেই এবং নিউজউইক জানায়, তারা স্বাধীনভাবে এই তথ্য যাচাই করতে পারেনি।

 

চীন কি রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য তার সেনা পাঠাচ্ছে?

 

জবাব ‘না’। এমনকি জেলেনস্কি যদি ঠিকও বলে থাকেন যে, চীনা নাগরিকরা রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে। জেলেনস্কির দাবির অর্থ এই নয় যে, বেইজিং তাদের সেখানে পাঠিয়েছে।

 

আসল ব্যাপার হলো, বিভিন্ন দেশের ভাড়াটে সেনারা পর্যটক হিসেবে রাশিয়ায় এসেছে এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। বেশ কয়েকজন বিদেশি ভাড়াটে সেনাও যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষে লড়াই করেছে।

 

গত তিন বছরে অনেক বিদেশি নাগরিক দাবি করেছেন যে, তাদেরকে অন্য চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাশিয়ান বা ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীতে যোগদানে বাধ্য করা হয়েছে। 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন