আসামি ধরে বিপাকে বগুড়া ডিবির ওসিসহ তিন কর্মকর্তা

১ সপ্তাহে আগে
বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ইনচার্জসহ তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে রাজশাহীর রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ) সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রশাসনিক কারণে তাদের সংযুক্ত করা হয়েছে বলে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাজাহান স্বাক্ষরিত আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) স্বাক্ষরিত এ আদেশটি বুধবার (১৫ অক্টোবর) বগুড়া জেলা পুলিশে পৌঁছায়।

 

যাদের সংযুক্তির আদেশ দেয়া হয়েছে তারা হলেন: বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ ইকবাল বাহার, পুলিশ পরিদর্শক রাকিব হোসেন এবং উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ফজলুল হক।

 

বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ ইকবাল বাহার নিজেই তার প্রত্যাহারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

এদিকে ডিবির ইনচার্জ ইকবাল বাহারের প্রত্যাহার আদেশ বাতিলের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সদস্য সচিব সাকিব খান। তিনি ঘোষণা দেন, ‘বগুড়া ডিবির ওসির বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার এসপি অফিস ঘেরাও করা হবে।’

 

অপরদিকে এনসিপির বগুড়া জেলা শাখার সদস্য শওকত ইমরানও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডিবির ওসির প্রত্যাহার আদেশ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

 

বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

ডিবির তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের নেপথ্য ঘটনা

 

ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত শনিবার রাতে বগুড়ার ডিবি পুলিশ ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানা এলাকা থেকে রাজু মুন্সি (২৫) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে বগুড়ায় নিয়ে আসে। পরদিন তাকে একটি প্রতারণা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

 

রাজু মুন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয়ে গত ২৭ জুলাই বগুড়া শহরের আব্দুল হক নামের এক ব্যবসায়ীকে ফোন করে তার মাদ্রাসাপড়ুয়া সন্তানের শিক্ষাবৃত্তির নামে ব্যাংক হিসাব নম্বর চান। পরে ওই হিসাব থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ২৭ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৫ টাকা তুলে নেন।

 

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে ডিবির পুলিশ পরিদর্শক রাকিব হোসেন তদন্ত শুরু করেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দীর্ঘ তদন্ত শেষে ডিবি পুলিশ রাজু মুন্সিকে শনাক্ত করে। এরপর তাকে গ্রেফতারে র‌্যাবের সহযোগিতা চাওয়া হয়।

 

আরও পড়ুন: বগুড়ায় শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার

 

ডিবি পুলিশের অনুরোধে র‌্যাব ফরিদপুর রাজু মুন্সিকে গ্রেফতার করলে শনিবার রাতে ডিবির একটি দল তাকে বগুড়ায় নিয়ে আসে। পরদিন ১১ অক্টোবর আব্দুল হক বাদী হয়ে প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান ডিবির এসআই ফজলুল হক।

 

গ্রেফতারের পর রাজুর কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত সিমকার্ড ও নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া টাকার মধ্যে ব্যাংকে জমা থাকা ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদালতের মাধ্যমে জব্দ করা হয়।

 

ডিবির ইনচার্জের বক্তব্য

 

বগুড়া ডিবির ইনচার্জ ইকবাল বাহার বলেন, ‘ডাকাতির মামলার অনুরোধপত্র পাঠিয়ে গ্রেফতার করা যুবককে প্রতারণা মামলায় চালান দেয়ার বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কারণে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি তিনজনকে ডিবি থেকে প্রত্যাহার করে আরআরএফে সংযুক্তির আদেশ দিয়েছেন।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘ডিবির পরিদর্শক রাকিব হোসেন দীর্ঘ তদন্তে রাজু মুন্সিকে শনাক্ত করেন। প্রতারণার ঘটনায় মামলা দেরিতে হওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই প্রতারককে গ্রেফতারের জন্য বগুড়া সদর থানার মামলা নং ৮৭, তারিখ ৩০/০৪/২০২৫, ধারা ৩৯৫/৩৯৭ মূলে র‌্যাব–১২ বগুড়াকে একটি অনুরোধপত্র পাঠানো হয়। এরপর র‌্যাব ফরিদপুর রাজু মুন্সিকে গ্রেফতার করে ভাঙ্গা থানা হেফাজতে রাখে। পরবর্তীতে আলোচনা শেষে তাকে বগুড়ায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেন। এরপর বাদীর লিখিত এজাহারের ভিত্তিতে বগুড়া সদর থানায় মামলা নং ৪৩, তারিখ ১১/১০/২০২৫, ধারা ৪০৬/৪২০ পেনাল কোডে মামলা রুজু করা হয়।’

 

ইকবাল বাহার বলেন, ‘প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে দ্রুত গ্রেফতারের জন্য ডিবি পুলিশ কৌশল নিয়েছিল। এত বড় প্রতারককে ধরার জন্য টিমের পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল। অথচ সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

 

বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জসহ তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের বিষয়ে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাজাহানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার মন্তব্য জানার জন্য মোবাইলে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন