তিনি সর্বদা আমাদের দেখছেন, আমাদের ওপর দৃষ্টি রাখছেন। তিনি অপেক্ষা করছেন, আমরা যেন তাকে ডাক দিই, তার সঙ্গে কথা বলি, তার কাছে চাই, তার সামনে কাঁদি। আমাদের কেবল প্রয়োজন নিজেদের সমর্পণ করা, এবং আমাদের হৃদয়টা তার হাতে তুলে দেয়া।
আল্লাহ আমাদের অশ্রু ভালোবাসেন। তিনি ভালোবাসেন যখন আমরা ভালোবাসা, অনুতাপ বা ভয় থেকে কেঁদে উঠি। যখন আমরা তার ভয়ে কাঁদি, বা তার প্রতি আকুলতায় কাঁদি, তিনি তা ভালোবাসেন।
আরও পড়ুন: নবীজির প্রিয় স্ত্রী
আমাদের প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না; আর যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে, সেই চোখে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। নবীজী (সা.) নিজেও নানা সময় আল্লাহর সামনে কেঁদেছেন। তাহলে আমরা কীভাবে আল্লাহর জন্য কাঁদতে পারি? আল্লাহর কাছে কাঁদতে পারি?
১. হৃদয়কে আল্লাহর ভালোবাসায় পূর্ণ করা
আমাদের আত্মার কেন্দ্র হলো হৃদয়। আমরা চাইলে এতে যেকোনো কিছু ভরতে পারি, এই হৃদয়কে আল্লাহর ভালোবাসায় আলোকিত করা উচিত। আল্লাহ চান আমরা তাকে ভালোবাসি, নিজেদের থেকেও বেশি, স্ত্রী-সন্তান, সম্পদ ও দুনিয়ার সবকিছুর চেয়েও বেশি। যখন আমরা আমাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে খুলে দিই, তখন আমরা তার সঙ্গে সংযুক্ত হই। কোরআনে আল্লাহ বলেন,
তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করব। ভাবুন তো! আমরা যখন আল্লাহকে স্মরণ করি, তখন তিনি-ও আমাদের স্মরণ করেন, এর চেয়ে সুন্দর সম্পর্ক আর কী হতে পারে? যখন এই সম্পর্ক গভীর হয়, আমরা তার সঙ্গে কথা বলি, তাকে বিশ্বাস করি, তার সামনে কাঁদি, ভালোবাসা, অনুতাপ, আকুলতায়।
২. আল্লাহর অনুগ্রহ অনুভব করা
আল্লাহ আমাদের অসংখ্য নিয়ামত দিয়েছেন। সকালে তাজা বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়া, প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখা, এসব তারই দান। এই নিয়ামতগুলো অনুভব করুন, হৃদয়ে কৃতজ্ঞতা আনুন। কুরআন পড়ুন, কুরআন হৃদয়কে কোমল ও পবিত্র করে।
এক-দুটি আয়াত নিয়ে চিন্তা করুন। পাহাড় দেখলে মনে করুন, আল্লাহ কুরআনে তাদের কীভাবে উল্লেখ করেছেন। পিঁপড়া দেখলেও মনে করুন, এটিও আল্লাহর সৃষ্টি, যাকে তিনি তার কিতাবে স্থান দিয়েছেন।
যখন আমরা আল্লাহর সৃষ্টিতে ধ্যান করি, জিকিরে বসি, তখন তার নিকটতার অনুভূতি বাড়ে। এই অনুভূতি দুনিয়ার ভালোবাসা সরিয়ে দেয়, আর আল্লাহর ভালোবাসা বসায়। তখন কান্না সহজ হয়ে যায়।
৩. আল্লাহকে জানা
আমরা আল্লাহকে কতটা জানি? তার ৯৯টি সুন্দর নাম জানা, তাদের অর্থ ও অনুভব বোঝা, এটাই হৃদয়কে জাগ্রত করে। ইমাম গাজালি (রহ.)-এর আল্লাহর ৯৯ সুন্দর নাম বইটি এ বিষয়ে অসাধারণ। এই নামগুলো উচ্চারণ করে চিন্তা করুন,
যখন বলবেন আর-রহমান (পরম দয়ালু), আল-গফ্ফার (ক্ষমাশীল) বা আত-তাওয়াব (তাওবা কবুলকারী) তখন হৃদয়ে কী অনুভূতি জাগে? এইভাবে নামসমূহের অর্থ উপলব্ধি করলে, কান্না আর কঠিন থাকে না, তাওবার অশ্রু তখন সহজেই ঝরে পড়ে।
৪. নিজের ভাষায় দোয়া করা
শায়খ কামালুদ্দীন আহমদ বলেন, শুধু আরবি নয়, নিজের মাতৃভাষায়ও দোয়া করা উচিত। আরবিতে দোয়া করা সুন্নাহ, কিন্তু নিজের ভাষায় আল্লাহর সঙ্গে কথা বলা, এটিও নবীজির আমল। কারণ তিনিও তাঁর ভাষায় আল্লাহর সঙ্গে কথা বলতেন। নিজের ভাষায় কথা বললে হৃদয়ের কথা সহজে প্রকাশ পায়। তখন অনুভূতি জাগে, কান্না আসে স্বাভাবিকভাবে।
আরও পড়ুন: নবীজির প্রিয় ও পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে সিরাতের বই ‘নবীজির প্রিয় ১০০’
৫. মৃত্যু স্মরণ করা
আল্লাহর সামনে কাঁদার আরেকটি কার্যকর উপায় হলো, মৃত্যু স্মরণ করা। আজকের ব্যস্ত জীবনে আমরা মৃত্যুকে ভুলে যাই। অথচ বসন্তের হাওয়ায়, ফুলের ফোটায়, পাখির গানে আমরা জীবনের পুনর্জন্ম দেখি। যেমন শীত শেষে প্রকৃতি জেগে ওঠে, তেমনি মৃত্যুর পর আমরাও একদিন পুনরুত্থিত হবো।
]]>
৩ সপ্তাহ আগে
৩







Bengali (BD) ·
English (US) ·