সরেজমিনে দেখা যায়, একটার পর একটা আলুভর্তি যানবাহন ভিড়ছে হিমাগারের সামনে। একটি ট্রাক থেকে আলু নামাতে নামাতে আরেকটি এসে ভিড়ছে। সবার উদ্দেশ্য, হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা। হিমাগারের ফটকের সামনে ট্রাক্টর, ভটভটি, ভ্যান, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে আলু নিয়ে এসেছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তারা হিমাগারের সামনে দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন। কেউ তিন দিন, কেউ আবার পাঁচ দিন ধরে হিমাগার ফটকের বাইরের রাস্তায় অপেক্ষা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হিমাগারে আলু রাখতে প্রতি বছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে বুকিং দিতে হয়। আলু রাখা শুরু হয় মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। হিমাগারে মূলত ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, দিনাজপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের আলু ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা আলু সংরক্ষণ করেন। আলুর পাশাপাশি সারা বছর স্বল্প সময়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফল সংরক্ষণ করেন ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, অধিকাংশই এসেছেন উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকে। প্রচণ্ড গরমে ট্রাকভর্তি আলু নিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকায় আলু নষ্টের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। মাত্র দুদিন পর ঈদ, এখানে এসে আটকে থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ করতে পারবেন কি না তা নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
আরও পড়ুন: বাংলাবান্ধা দিয়ে নেপাল গেল আরও ২৫২ মেট্রিক টন আলু
ঠাকুরগাঁও থেকে আসা আলু ব্যবসায়ী কাশেম মোল্লা বলেন,
গত তিন দিন যাবত এখানে এসেছি দুই ট্রাক আলু নিয়ে। সিরিয়াল পেয়েছি, আরও একদিন দেরি করতে হবে। পুরনোর সঙ্গে নতুন ব্যবসায়ীরা আসায় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
পঞ্চগড় থেকে আসা ট্রাকচালক সবুর শেখ বলেন, ‘আলু নিয়ে এসে ধরা খেয়ে গেছি। গত দুদিন আগে এখানে এসেছি। আরও একদিন লাগবে। ঈদের আগে আরও দুইটি ট্রিপ মারতে পারতাম। কিন্তু এখানে এসে আটকা পড়েছি। বসে খেতে খেতে পকেটের টাকাও ফুরিয়ে যাচ্ছে।’
সবুর শেখ আরও বলেন, ‘বসে থাকার জন্য কিছু টাকা দিতে চেয়েছে আলু ব্যবসায়ী। কিন্তু কত টাকা আর তিনি দেবেন। ঈদের আগে অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। পরিবার পরিজনের জন্য কেনাকাটাও করতে পারিনি।’
ঠাকুরগাঁও থেকে আসা ট্রাক চালক আক্কাস হোসেন বলেন, ‘ঈদের আগে পরে ট্রাক চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে আটকে রয়েছি। আলু আনলোড করতে না পারলে যেতে পারছি না। ঈদের আগে সবারই ইচ্ছা থাকে রোজগার বেশি করতে। কিন্তু আলু নিয়ে এসে এবারের ঈদ করাটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’

আলু ব্যবসায়ী রফিক হোসেন বলেন,
ক্ষেত থেকেই অনেকেই ট্রাকে করে আলু নিয়ে এসেছেন। আলু কাচা থাকায় ট্রাকের মধ্যে দুই থেকে তিন দিন থাকায় বেশ কয়েকটি ট্রাকের কিছু আলু পচে গেছে। তবে পরিমাণে অল্প হওয়ায় ক্ষতি কম হয়েছে।
জানা যায়, ফরিদপুর হিমাগারটি শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে গোয়ালচামট এলাকায় অবস্থিত। ব্যক্তিমালিকানাধীন ‘ফরিদপুর হিমাগার লিমিটেড’ ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। হিমাগারটিতে ৬০ কেজি ওজনের আলুর বস্তায় দেড় লাখ বস্তা রাখা যায়।
আরও পড়ুন: আলুর দাম কম হওয়ায় চাষিরা ছুটছেন হিমাগারে, পড়ছেন সিন্ডিকেটের খপ্পরে
ফরিদপুর হিমাগার লিমিটেডের প্রতিনিধি মো. সাফিউর রহিম বলেন,
দেশে এ বছর অধিক ফলন ও একই সঙ্গে সবাই আলু নিয়ে আসায় বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে। তবে আশা করছি ঈদের আগেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এ বছর আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরনো ব্যবসায়ীর পাশাপাশি নতুন ব্যবসায়ীরাও আলু নিয়ে এসেছেন। এ কারণে আনলোড করতে দেরি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত অনলোড করে যাচ্ছি। কিন্তু একটি ট্রাকের আলু নামাতে নামাতে আরেক ট্রাক এসে হাজির হচ্ছে। গত বছর এত চাপ ছিল না, অর্ধেক পরিমাণ খালি ছিল হিমাগার।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবসায়ীরা বস্তাপ্রতি ২৮০ টাকা থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা হারে ভাড়া দেন। আলু রাখতে আসা সবারই একটু কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি। তবে চিন্তার কিছু নেই। হিমাগারে জায়গা খালি আছে। দুই থেকে একদিনের মধ্যেই সব ট্রাকের আলু আনলোড করতে পারবো বলে আশা করি।’
]]>