পটুয়াখালীর গলাচিপা বাজারে দেখা গেল এমন এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। বাজার এখন আর শুধু বেচাকেনার স্থান নয়, হয়ে উঠেছে সহানুভূতির এক মঞ্চ। রাজনীতি, অর্থনীতি কিংবা সমাজ—সবকিছুর ঊর্ধ্বে এই কর্মসূচি ছুঁয়ে যাচ্ছে মানবতার বোধকে।
রোববার (৪ মে) সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। উদ্বোধন করেন পটুয়াখালী-০৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক শাহ আলম।
উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক শাহ আলম বলেন, আমরা রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণে। বাজারের এই অংশটুকু যেন হয়ে ওঠে সমাজের অবহেলিত মানুষের নিরাপদ আশ্রয়। তারা যেন বাজার থেকে খালি হাতে ফিরে না যান, বরং কিছু নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন মাথা উঁচু করেই। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য, বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে অসচ্ছল মানুষের একটি সেতুবন্ধন তৈরি করা। যেখানে অনাহার নয়, থাকবে অংশগ্রহণ এবং সম্মান।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে নার্সিং শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
প্রতিটি কাঁচাবাজার ও মুদি দোকানে বসানো হয়েছে প্লাস্টিকের বালতি—ছোট ছোট দানবাক্স। দোকানদারদের সহযোগিতায় সেগুলোয় জমা হচ্ছে চাল, ডাল, আলু, শাক, পেঁয়াজসহ প্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যপণ্য। দোকানি নিজেই তা তুলে দিচ্ছেন দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের হাতে।
সবজি বিক্রেতা মুজাফফর মিয়া বললেন, এই কাজটা করতে গিয়ে মনে হচ্ছে, দোকান চালানোর বাইরেও আমি কিছু করছি মানুষের জন্য। আমরা যেন শুধু পণ্য বিক্রেতা নই। একটি দায়িত্ববান সমাজের অংশীদার। এ অনুভবই আমাদের বদলে দিচ্ছে।
মো. সরোয়ার হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি নিয়মিত বাজার করেন গলাচিপায়। প্রথম যখন বালতিটা দেখি, মনে হলো এটা কেবল দান নয়, এটা অংশগ্রহণ। আমি যা নিচ্ছি বাজার থেকে, তার একটুখানি ফেরত দিচ্ছি সমাজকে। এমন উদ্যোগ হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়।
অন্যদিকে বিধবা নারী সালেহা বেগম জানান, সকালবেলা এসে সংগ্রহ করছি চাল ও সবজি। এখানে এসে কাউকে হাত পাততে হয় না। দোকানদার নিজেই বলে, আপনার জন্য রাখা হয়েছে। এটা যেন দয়ার জায়গা নয়, ভালোবাসার জায়গা। এতদিন পর মনে হলো, এই বাজারে আমারও জায়গা আছে।
আরও পড়ুন: শ্রমিক সংকটে বিপাকে পড়া কৃষাণির ধান কেটে দিলো কৃষক দল
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন গলাচিপা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা জাকির হোসেন, পৌর আমির মাওলানা বেলাল বিন সুলতান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী যুব সমাজের প্রতিনিধি শাহ জুবায়ের আবদুল্লাহ।
জুবায়ের আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা চাই এই উদ্যোগ গলাচিপা ও দশমিনার প্রতিটি বাজারে ছড়িয়ে পড়ুক। এটি কোনো দলীয় প্রচারণা নয়, এটি এক মানবিক চিন্তা। তাই সব রাজনৈতিক দলের, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের অংশগ্রহণই একে সফল করবে। এ কর্মসূচি প্রমাণ করে, সমাজ বদলে দেওয়ার জন্য বড় পদক্ষেপ নয়। চাই ছোট ছোট দায়িত্ববোধ। একটি বালতি, কিছু সদিচ্ছা, আর কিছু সাড়া দেওয়া হৃদয়। এতেই গড়ে উঠতে পারে সহানুভূতির এক সমাজ।’