আকাশছোঁয়া দামে পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ এখন বিলাসিতা

৬ দিন আগে
পান্তা-ইলিশ যেন বাঙালির নববর্ষ উদ্‌যাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যুগ যুগ ধরে পহেলা বৈশাখে এই খাবার রীতিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এবার সে রীতি রীতিমতো হুমকির মুখে। বাজারে ইলিশের তীব্র সংকট আর যে অল্প কিছু ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, তাও দাম আকাশছোঁয়া। ফলে এবারের পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ হয়ে উঠছে অনেকের জন্য বিলাসিতা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পটুয়াখালীর আলিপুর ও মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের চিত্র হতাশাজনক। এসব কেন্দ্রে ইলিশের জোগান আশঙ্কাজনকভাবে কম। মাছ ধরার ট্রলারগুলোর বেশিরভাগই খালি হাতে ফিরে আসছে।


মহিপুরের জেলে আবদুল মতিন বলেন, গত এক সপ্তাহে কয়েকবার সাগরে গেছি, কিন্তু তেমন মাছ পাইনি। আগে এই সময় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ত, এখন একদমই নেই।


জেলেদের অভিযোগ, অনাবৃষ্টির কারণে সাগরে ইলিশের আনাগোনা কমে গেছে। তার ওপর দেশের ছয়টি নদীর অভয়াশ্রমে সরকারের জারি করা নিষেধাজ্ঞা আরও একধাপ সংকট তৈরি করেছে। মার্চ ও এপ্রিল মাসে ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুম থাকায় সরকার প্রতিবছর এই সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখে। এতে নদীতে মাছ ধরা প্রায় বন্ধ থাকায় জেলেরা বেকার সময় পার করছেন।


এ সংকটের সরাসরি প্রভাব পড়েছে বাজারে। পাইকারি ও খুচরা দুই বাজারেই ইলিশের দাম ঊর্ধ্বমুখী। মহিপুর ও আলিপুর পাইকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ১ কেজি ওজনের ইলিশ আড়াই হাজার টাকা, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ সাড়ে ৩ হাজার টাকা এবং ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকায়। আর খুচরা বাজারে তো দাম আরও অনেক বেশি।


স্থানীয় এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, মৌসুমের শুরুতে যেটুকু মাছ উঠেছিল, তা এখন প্রায় শেষ। পহেলা বৈশাখ সামনে থাকায় চাহিদা অনেক, কিন্তু জোগান নেই। তাই দাম বাড়ছেই।
এদিকে ক্রেতারা পড়েছেন সবচেয়ে বড় বিপাকে। পটুয়াখালী শহরের কাঁচাবাজারে কথা হয় শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়া আমাদের পরিবারে একটা আনন্দঘন রীতি। কিন্তু এবারের বাজার দেখে বুঝছি সেটা আর সম্ভব নয়। এত দামে মাছ কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।


আরও পড়ুন: পদ্মার এক ইলিশের দাম সাড়ে ৮ হাজার টাকা!


শুধু শহর নয়, জেলার বিভিন্ন হাটেও একই অবস্থা। অনেকেই বাজারে গিয়ে ফিরে আসছেন খালি হাতে। কেউ কেউ ইলিশ ছাড়াই নববর্ষ উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে এখনই পরিকল্পিত উদ্যোগ দরকার। সঠিক সময়ে নিষেধাজ্ঞা মানা, সচেতনতা বাড়ানো ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ছাড়া এই সংকট মোকাবিলা কঠিন হবে। এই সময়টায় ইলিশ সংরক্ষণের জন্য নিষেধাজ্ঞা থাকাটা প্রয়োজনীয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি ইলিশ উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বাজারে প্রভাব পড়তেই পারে।


এদিকে নববর্ষ ঘিরে খাবার হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ক্যাটারিং ব্যবসায়ীরা পড়েছেন সমস্যায়। আগে থেকেই অনেক অর্ডার নেয়া থাকলেও ইলিশের উচ্চমূল্যের কারণে এখন তারা পড়েছেন বিপাকে। কেউ কেউ বিকল্প মেনু তৈরি করছেন।


সব মিলিয়ে এবারের বৈশাখে পান্তা-ইলিশ শুধু রীতির অংশ নয়, তা যেন একটি কল্পনা, একটি স্মৃতি। বাজারে ইলিশ আছে, কিন্তু অধিকাংশের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন