ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে নানা ভিডিও নিয়ে প্রায়ই হাজির হন লিজা আক্তার প্রিয়া। রূপের জাদুতে বশ করেন টার্গেট ব্যক্তিকে। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী জামাল উদ্দিন জুয়েল। দুজন মিলে গড়ে তুলেছে হানি ট্র্যাপ চক্র।
ফাঁদে ফেলে মামলা আর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার এক অডিও ক্লিপ যার বড় প্রমাণ। অডিও ক্লিপটিতে প্রিয়া জুয়েলকে বলেন, বিয়ে করলে রেপুটেশন খারাপ হয়ে যায়, মেহেদিকে ধর্ষণ মামলা দিয়ে দেবে। ওর সঙ্গে কিছুই করলাম, না সংসার করছি; না...’।
আরও পড়ুন: ইউএনওডিসির প্রতিবেদন / প্রেমের ফাঁদে ফেলে হাজার কোটি ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে হ্যাকাররা!
জবাবে জুয়েল বলেন, এমন মানুষকে (গালি দিয়ে) বিয়ে করো যাদের বাড়ি নাই, গাড়ি নাই, কিছুই নাই। তখন প্রিয়া বলেন, মেহেদি তো নিখোঁজ হয়ে গেছে। মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে। আর আমরা তো আছি তোমার পাশে, এরপর তোমাকে ৫ লাখ টাকার একটা গেম এনে দেবো। তবে ওটা নিয়ে কামরুলের সঙ্গে আলাপ করা যাবে না। আর প্রিয়ার এই প্রস্তাবের জবাবে জুয়েলকে বলতে শোনা যায়, কামরুলকে আউট করে দিচ্ছি। সব সেটাপ নতুন করে দেবো।
দুজনের কথোপকথনই বলছে, নিরীহ ব্যক্তিদের ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসিয়ে টাকা কামানোই চক্রটির নেশা। প্রিয়া ও জুয়েলের হানি ট্র্যাপ চক্রে আরও কয়েকজন নারী, কাজী ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত।
তাদের এই চক্রটির এমনই এক মিথ্যা মামলায় জর্জরিত সৌরভ হোসেন। এক বছর ধরে আদালতের দুয়ারে ঘুরপাক খাচ্ছেন তিনি। গত বছরের জানুয়ারিতে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আইনজীবী জামালের দক্ষিণ খান এলাকার চেম্বারে বন্দি করা হয় তাকে। ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
বাঁচতে বাধ্য হয়ে বিয়ে করলেও ১০ লাখ টাকার জন্য এবার যৌতুক মামলার আসামি তিনি। সৌরভ বলেন, আমরা একদিনও সংসার করিনি। বিয়ের পর থেকে দুইজনই নিজ নিজ বাসায় থাকতেছি। তবে বিয়ের তিনদিন পর সে থানাতে নির্যাতনের মামলা করে।
তবে সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে আসে গোমর। বিয়ের পর একদিনের জন্যও সংসার করেননি প্রিয়া, অথচ দিয়েছেন যৌতুক মামলা। একাধিক বিয়ে, আর পূর্বের স্বামীকে তালাক না দিয়েই সৌরভকে বিয়ের বিষয়টিও উঠে আসে সে তদন্তে।
প্রিয়ার একাধিক বিয়ের কাবিননামাও আসে সময় সংবাদের হাতে। প্রতিটি বিয়েতেই নিজেকে কুমারী ও অবিবাহিতা দাবি করেছেন তিনি। দিয়েছেন একাধিক ব্যক্তির নামে যৌতুক মামলাও। সব মামলাই আবার লড়ছেন আইনজীবী জামাল উদ্দিন জুয়েল।
প্রিয়ার করা মামলা আর একাধিক অভিযোগে দেয়া ঠিকানার অস্তিত্বই নেই দক্ষিণখানে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রিয়ার দেয়া ঠিকানার নামে কোনো এলাকাই নেই দক্ষিণখানে।
মামলার তারিখে তাই আদালতে উপস্থিত সময় সংবাদ। প্রিয়া আদালতে আসেন পর্দাশীল নারী হয়ে। সঙ্গে আছে নামসর্বস্ব মিডিয়ার সাংবাদিকও। তবে সময় সংবাদের ক্যামেরা দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি।
আরও পড়ুন: তরুণীর প্রেমে সর্বহারা ব্যবসায়ী, অতঃপর...
ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবীর দোহাই দেন প্রিয়া।
তিনি বলেন,
কোনো বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে ইচ্ছুক নই। আমার আইনজীবী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবে।
তবে ক্যামেরার সামনে ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ের অডিও ক্লিপটি মিথ্যা ও বানানো বলে দাবি করেন ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী জামাল উদ্দিন জুয়েল। তিনি বলেন, অডিও ক্লিপটি ভুয়া। যদি সত্যি হয়, তাহলে মামলা করুক আমার নামে। সাংবাদিকতা করে সত্য-মিথ্যা যাচাই করা যাবে না।
অবশ্য চেম্বারের বাইরে আলাদা করে কথা বলতে গিয়ে স্বীকার করেন অপকর্মের কথা। গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিওতে তিনি বলেন, তিন-চারটা ছেলে নিয়ে আমার চেম্বারে এসে কথা বলছিল, তখন রাগারাগি করে কথা বলেছি; সেটাই তারা রেকর্ড করেছে।
আইনজীবীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. খোরশেদ মিয়া আলমের কাছে গেলে প্রিয়া ও আইনজীবী জুয়েলের অডিও ক্লিপ শুনে হতবাক তিনি। বলেন, অডিওতে তাদের অপকর্মের পরিকল্পনার কথা শুনেছি। এটি অপরাধ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
]]>
২ সপ্তাহ আগে
৪







Bengali (BD) ·
English (US) ·