বছর শেষে লাভ ক্ষতির খেরোখাতায় অনেক হিসেবেই থেকে যায় গড়মিল। ১২ মাস ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে কাটলেও, সুযোগ থাকে পরের বছর ঘুরে দাঁড়ানোর। তবে অনেক সময় পরিস্থিতি এমন কিছু কেড়ে নেয়, যে শূণ্যতা বয়ে বেড়াতে হয় আজীবন। ২০২৪ সালে দেশের ক্রীড়াঙ্গন এমনই কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
দেশের ক্রীড়াঙ্গন অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয় ৫ জুলাই। জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালে খেলতে খেলতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া। তাৎক্ষনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও ফেরানো সম্ভব হয়নি কিংবদন্তিকে। মাত্র ৫০ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জিয়া। তার কাছ থেকে আরও বহু কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার পর বিশ্বের দরবারে প্রথমবারের মতো লাল সবুজের পতাকা উড়ে ১৯৯০ কমনওয়েলথ গেমসের মঞ্চে। ১০ মিটার পিস্তলে আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে জুটি বেঁধে বাংলাদেশকে স্বর্ণ পদক উপহার দেন আতিকুর রহমান। চলতি বছরের ১৭ জুলাই স্বাধীনতা পদক জয়ী এই কিংবদন্তিকে হারায় দেশের ক্রীড়াঙ্গন। লম্বা সময় ধরে কণ্ঠনালীর ক্যান্সারে ভোগা এই শুটার বিদায় নেন ৫৯ বছর বয়সে।
আরও পড়ুন: ফিরে দেখা ২০২৪ /বিশ্বজুড়ে অস্থিরতার মাঝেও ক্রীড়াঙ্গনে বছরটা ছিলো ঘটনাবহুল
খেলাধুলাও হতে পারে প্রতিবাদের ভাষা। অবদান রাখতে পারে মুক্তির সংগ্রামে। ১৯৭১-এ এমন ভাবনা নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। রাইফেল-স্টেনগানের বদলে তার দলের অস্ত্র ছিলো ফুটবল। যুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন জায়গা ম্যাচ খেলে গড়ে তুলেছিলেন স্বাধীন বাংলার পক্ষে জনমত। লাল-সবুজ ফুটবলের এই অগ্রজ বিদায় নেন গেল নভেম্বরে।
চলতি মাসে হুট করেই মৃত্যু সংবাদ আসে ২০১০ এসএ গেমস জয়ী শুটার সাদিয়া সুলতানার। নিশানা বাজিতে দক্ষিণ এশিয়ায় তার শ্রেষ্ঠত্ব থাকলেও অদৃশ্য কারণে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। নানা কারণে বেশ মানসিক চাপে ছিলেন সাদিয়া। ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে চেষ্টা করেছিলেন আত্মহত্যার।
দিন মাস বছর পেরোয়, কিন্তু বদলায় না দেশের ক্রীড়াঙ্গনের দৃশ্যপট। এবারও প্যারিস অলিম্পিক থেকে ব্যর্থতার ষোলকলা পূরণ করে ফেরে বাংলাদেশ। আর্চারি আর শুটিংয়ে প্রত্যাশা থাকলেও ফলাফল ছিলো খুবই হতাশার। উল্টো ব্যাপক সমালোচনার জন্ম হয় স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমানকে নিয়ে। গণমাধ্যমে খবর বের হয় ইচ্ছে না থাকা স্বত্তেও তাকে জোর করে অলিম্পিকে খেলতে বাধ্য করে ফেডারেশন।
পাঁচ আগস্ট পরবর্তী প্রেক্ষাপটে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেয় ফেডারশনগুলো ঢেলে সাজানোর। সার্চ কমিটি গঠন করে বিভিন্ন ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। যে কাজ এখনও চলমান। তবে ক্রীড়া পরিষদ গতি আনতে পারেনি বঙ্গবন্ধ স্টেডিয়াম সংস্কারে। প্রায় ৫ বছরে ধরে চলা এই কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি ২০২৪-এ'ও।