পার্বত্য চট্টগ্রাম একসময় ঘন বনাঞ্চলের জন্য পরিচিত ছিল। কিন্তু নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন উজাড়, গাছ কাটা এবং নির্বিচারে বনজ সম্পদ আহরণের ফলে ঐতিহাসিক সেই বনভূমির অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তবুও অনেক এলাকায় স্থানীয় গ্রামবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে ‘ভিলেজ কমন ফরেস্ট (ভিসিএফ)’, পাড়াবন বা মৌজাবন নামে পরিচিত কিছু বন রক্ষা করে চলেছেন। তেমনই একটি উদাহরণ হলো দীঘিনালার পাবলাখালী মৌজাবন, যার আয়তন প্রায় ৭০০ একর।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, এই মৌজাবন থেকে গাছ, বাঁশ কাটা বা পশুপাখি শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ চুরি করেও গাছ, বাঁশ বা ঘরের লাকড়ি সংগ্রহ করলে কিংবা বন্যপ্রাণী শিকার করলে গ্রামের আইন অনুযায়ী তাকে শাস্তি পেতে হয়। এই বন রক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।
মৌজাবনে রয়েছে অন্তত ছয়টি ছড়া ও নালা। পাশাপাশি গর্জন, গামাঢ়ী, সিভিট, লম্বু, তেলসুর, চাপালিশ, বন জলপাই, উড়ি আম, খুদে জাম, হরতকি, বহেরা এমন অসংখ্য প্রজাতির বৃক্ষ। বনভূমির ভেতরে দেখা মেলে হরিণ, বনমোরগ, ভালুক, শুকর, ময়না, টিয়া-সহ নানা প্রজাতির পাখি ও বন্যপ্রাণী। বন সংরক্ষণের কারণে এসব ছড়া–ঝর্ণার পানির প্রবাহ সচল থাকায় আশপাশের জমিতে নিয়মিত চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। কারণ বন পানি ধরে রাখে ও সংরক্ষণ করে। জানা যায়, খাগড়াছড়ি জেলায় মোট ৫৯টি পাড়াবন রয়েছে।
পাবলাখালীর বাসিন্দা অজিত বরন চাকমা বলেন, ‘এই বন শুধু পরিবেশ নয়, আমাদের জীবন ও জীবিকার সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং জীবনের প্রয়োজনের তাগিদেই আমরা বন এবং জীব বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য কাজ করছি। এ কারণেই প্রায় ৭০০ একরের পাবলাখালী মৌজাবন আমরা সমস্বরে রক্ষা করে চলেছি।‘
দর্শনার্থী সাংবাদিক রুপায়ন তালুকদার জানান, ’বনের ভেতর ছড়া, ঝর্ণা আর গাছের পরিমাণ দেখে আমরা মুগ্ধ। অনেক জায়গায় যখন হাজার হাজার গাছ কেটে ফলজ বাগান করা হচ্ছে, তখন পাবলাখালীর পাড়াবাসীরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পরিবেশ রক্ষার জন্য জোরালো ভূমিকা রাখছেন। ইউএনডিপি এবং পার্বত্য জেলা পরিষদের আর্থিক সহায়তায় এই বন সংরক্ষণ আরও এগিয়ে যাচ্ছে। ছড়া–ঝর্ণার পানি কৃষিজমিতে সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এখানে ছয়টি ছড়া ও ঝর্ণা রয়েছে, যেগুলোর পানি প্রবাহ এখনো স্বাভাবিক। বন রক্ষায় রয়েছে কঠোর আইন।‘
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা চিংহ্লামং চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। এই মৌজাবনের আয়তন প্রায় ৭০০ একর। এখানে অন্তত চারটি বড় ছড়া, গিরি-ঝিরি ও ঝর্ণা রয়েছে এবং পানি প্রবাহ অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এখানকার মাতৃগাছগুলোও সুস্থ আছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। বন রক্ষায় যদি সহযোগিতা করা যায়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে পারব।‘
জেলা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা বলেন, ‘খাগড়াছড়ি জেলায় বহু পাড়াবন আছে। এগুলো দীর্ঘদিন ধরে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দীঘিনালার পাবলাখালী পাড়াবন অত্যন্ত সমৃদ্ধ। পাড়াবাসীরা আন্তরিকভাবে বনটি রক্ষা করছেন। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ পাড়াবন রক্ষায় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আমাদের সহযোগিতা লাগলে বন বিভাগ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।‘
স্থানীয়রা মনে করেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান বনভূমি জনসংখ্যা ও পরিবেশগত ভারসাম্যের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। তাই জীব বৈচিত্র্য ও জলবায়ু রক্ষায় সরকারি উদ্যোগে নতুন নতুন বন সৃষ্টির দাবি জানান তারা।
]]>
১ সপ্তাহে আগে
৪






Bengali (BD) ·
English (US) ·