৭ বছরেও চালু হয়নি শোধনাগার: বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত চুয়াডাঙ্গাবাসী

২ সপ্তাহ আগে
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধনাগার ৭ বছর আগে চালু হলেও পানি সরবরাহ সম্ভব হয়নি। বন্ধ থাকায় নষ্ট হয়েছে মূল্যবান জিনিসপত্র। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ শোধনাগার ব্যবহারের অনুপযোগী আর জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। পৌর এলাকার সাধারণ নাগরিকরা বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

পাম্প হাউজগুলো সরাসরি পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করছে। সরবরাহকৃত পানি খাওয়ার ও ব্যবহারের অনুপযোগী। ময়লা, আয়রন ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি পাচ্ছেন গ্রাহকরা। ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের পর কয়েকটি স্তরে ফিল্টার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পানি সরবরাহ করার অত্যাধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ওভারহেড ট্যাংক ও শোধনাগারটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধনাগার ও ওভারহেড পানির ট্যাংক নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। পৌর এলাকার ২ লাখ মানুষ পানির সুবিধা পায়। 


পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকবল সংকট ও বিদ্যুৎ বিল খরচ বেশি হওয়ায় শোধনাগারটি চালু রাখা সম্ভব নয়। শোধনাগারটি দ্রুত সময়ে চালুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।


২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে। ৩৭ জেলা শহর পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ছাগলফার্ম পাড়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ কাজ ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়। শেষ হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে। নির্মাণ কাজ শেষ ও হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ হলেও এখনও বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন সম্ভব হয়নি। যার ফলে পৌর এলাকার মানুষ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বাধ্য হয়ে ফিল্টার করা ব্যতীত সরাসরি পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা নোংরা পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। শোধনাগারের পানি সংরক্ষণ করার জন্য ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন সে সময়ের পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু। ৬৮০ ঘনমিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ওভারহেড পানির ট্যাংক নির্মাণ করা হয়।


শোধনাগারটি চালু না থাকায় নষ্ট হচ্ছে সুইজ ভাল্ব, মটর, ফিল্টার, পাইপ, রিজার্ভ ট্যাংক, পাম্প গ্যালারি, পানির ট্যাংক, জেনারেটর ও ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। স্টাফ কোয়াটার ও শোধনাগারের ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শোধনাগার থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫০ ঘনমিটার পানি উৎপাদন সম্ভব। প্রতিদিন সাড়ে ৩ হাজার ঘনমিটার পানি উৎপাদন হলে চাহিদার অর্ধেক পূরণ হবে। ৬ হাজার ৬৬৬ হাজার গ্রাহকের জন্য প্রতিদিন পানির চাহিদা রয়েছে ৭৬৯৪ ঘনমিটার। বর্তমানে ১৪টি পানির পাম্প হাউজ থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্রাহকদের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনটি পাম্প হাউজ বন্ধ রয়েছে বর্তমানে।

 

আরও পড়ুন: ড্রেজিং-এর অভাবে মরে যাচ্ছে মাদারীপুরের নদনদী, হারিয়েছে যৌবনও


এ পর্যন্ত ১১৫১ জন গ্রাহক পানির লাইনের সংযোগ কেটে দিয়েছেন। পৌর এলাকায় ১১৩ কিলোমিটার পাইপ লাইন রয়েছে পানি সরবরাহের জন্য। পাইপের মাপের উপর ভিত্তি করে পৌর কর্তৃপক্ষ বিল আদায় করেন গ্রাহকদের কাছ থেকে। ২০০-৫৫০ টাকা পর্যন্ত বিল আদায় করে।


ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধনাগারটি সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার মিরপুর এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীর আলম কনস্ট্রাকন্স নির্মাণ কাজ শেষ করে। ৬৮০ ঘনমিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ওভারহেড ট্যাংকটি ইউজিআইআইপি-৩ প্রকল্পের আওতায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমটি এ্যান্ড এসএম কনসোটিয়াম নির্মাণ কাজ করে। মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেনি। সে সময়ের ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দলীয় প্রভাব বিস্তার করে মূল ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ নিয়ে নিজেদের মত করে কাজ করে।


পৌর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দারা বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হলেও কোন কাজে আসছে না। তালাবদ্ধ অবস্থায় বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে। নষ্ট হচ্ছে জিনিসপত্র। ভবনগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ। এটি আর চালু করা সম্ভব হবে না। জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। সাপ আর পোকামাকড়ের বসবাস গড়ে উঠেছে। এত টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হরো তা চালু হবে না তাহলে নির্মাণ করার দরকার ছিল না। টাকা লুট করার জন্য এসব প্রকল্প গ্রহণ করেন কিছু সরকারি লোক। আমাদের দাবি শোধনাগারটি চালু করা হোক দ্রুত সময়ে। বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হোক। যারা প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। এখন আমরা নোংরা ও ময়লা যুক্ত পানি পাচ্ছি। যা ব্যবহারের অনুপযোগী। এ পানি ব্যবহার করে রোগ হচ্ছে।


চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রেজাউল করিম জানান, পানি শোধনাগারটি বন্ধ রয়েছে। এটি চালু রাখা ব্যয়বহুল। বিদ্যুৎ বিল আসবে প্রতি মাসে ৮-১০ লাখ টাকার। যা পৌরসভার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। আর লোকবল সংকট রয়েছে। কোন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেলে চালু করা সম্ভব হবে। চালু হলে গ্রাহকরা বিশুদ্ধ পানি পাবে। ব্যবহার না করলে যে কোন জিনিস তো নষ্ট হয়েই যাবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা নতুন করে পরিকল্পনা গ্রহণ করবো প্রয়োজনে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন