অবশেষে স্বেচ্ছাসেবী ও গণমাধ্যমকর্মী শামসুল হুদার প্রচেষ্টায় আজ নিজ দেশে ফিরলেন রামদেব। এ যেন ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘বজরঙ্গি ভাইজান’-এর মতো ঘটনা।
চলচ্চিত্রটিতে দেখা যায়, ভারত থেকে মার সঙ্গে বাড়িতে ফিরছিল পাকিস্তানি এক শিশু। হঠাৎ শিশুটি ট্রেন থেকে নেমে যায়। তখনই ট্রেন স্টেশন ছাড়ে। ভারতে আটকে পড়া সেই শিশু ফিরে যেতে চায় তার জন্মভূমিতে। আর এসময় সেই শিশুটিকে দেখতে পায় চলচ্চিত্রটির নায়ক সালমান খান তথা বজরঙ্গি ভাইজান। পরবর্তীতে নানা বাঁধা পেরিয়ে শিশুটিকে নিজ দেশে পাঠান সালমান খান।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন দিয়ে রামদেবকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এসময় সেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের ইমিগ্রেশন পুলিশের সঙ্গে বিজিবি ও বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাজা শেষ হবার ৬ বছর পর নিজ দেশে ফিরে যাওয়া রামদেব মাহাতো (৬০) ভারতের বিহার প্রদেশের বাতিয়া জেলার মাজালিয়া থানার গুদারা পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম তাপা মাহাতো।
আরও পড়ুন: বেনাপোলে পিস্তলসহ ভারতীয় ট্রাকচালক ও তার সহকারী আটক
জানা যায়, তিনি ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত থেকে আটক হন। পরবর্তীতে আদালত তাকে ৬ মাস সাজা দেন। কিন্তু ২০১৯ সালের ২৯ মে সাজা শেষে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও সঠিক ঠিকানা না থাকায় দীর্ঘদিন কারাগারেই থাকতে হয় তাকে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর স্বেচ্ছাসেবী ও গণমাধ্যম কর্মী শামসুল হুদার চেষ্টায় ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর রামদেব মাহাতোর পরিবারকে খুঁজে পাওয়া যায়। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর উভয় দেশের সম্মতিতে আইনি প্রক্রিয়া শেষে সোমবার ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাকে।
এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক ও গণমাধ্যম কর্মী শামসুল হুদা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার মো. জাকির হোসেন তাকে জানান, তার জেলে ১০ জন প্রত্যাবাসন বন্দি সাজা শেষে নিজ দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। সঠিক ঠিকানা না থাকায় তাদের ফেরানো যাচ্ছে না। সে তালিকা মোতাবেক তিনি বিহারের পশ্চিম চাঁমপাড়ান জেলার গুদ্রা গ্রামের খোঁজ পেয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত লাল বাচ্চা যাদবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে রামদেবের ছবি পাঠিয়ে গতবছরের ২০ নভেম্বর পরিবারের খোঁজ পাবার তিন দিন পর ২৩ নভেম্বর তিনি বিষয়টি প্রমাণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সব তথ্য-উপাত্তসহ বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা ভারতীয় দূতাবাসকে জানায়।
পরবর্তীতে নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই শেষে ভারতীয় দূতাবাস ২০২৪ সালের ১৮ মার্চ রামদেব মাহাতোর ছাড়পত্র বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ হবার প্রায় ৬ বছর পর তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হলো।