পুলিশ জানায়, এপ্রিলের শেষ দিকে আকসান ও হোসেন মিয়া মিলে ৫০০ টাকায় একজোড়া কবুতর কিনে আনে। কিছুদিন পর আকসান ভুল করে কবুতরটি খাঁচা থেকে ছেড়ে দেয়, যা আর ফিরে আসে না। এ নিয়ে দুই কিশোরের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং হোসেনের কাছ থেকে টাকা ফেরত দাবি করে আকসান।
গত সোমবার (৫ মে) হোসেন মিয়া তার নানির কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে আকসান, আজির উদ্দিন ও শরীফ নামে তিন কিশোরের সঙ্গে বাজারে যায়। ফেরার পথে আকসান তাকে জোর করে নির্মাণাধীন ভবনের নিচে নিয়ে ছুরি দিয়ে গলা, পেট ও বুকে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় হোসেন পথচারীদের জানায়, আকসান তাকে মেরেছে। হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল হক বলেন, অভিযুক্ত কিশোর স্মার্টফোনে অনলাইন গেইমে আসক্ত। এ ঘটনায় নিহতের মামা বিলাত আলী বাদী হয়ে আকসানকে প্রধান আসামি করে ও অজ্ঞাতনামা ৩ জনের নামে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আকসান ও আজির উদ্দিন নামের দুজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, হোসেনের গলা ও পেটে ধারালো ছুরির পাঁচটি আঘাত ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
নিহত হোসেনের পরিবার জানায়, আকসান ও তার ভাইরা এলাকার চিহ্নিত বখাটে। আকসান আগেও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটিয়েছে, যা অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়া হয়েছিল। তারা দাবি করেন, আকসান একা নয়, তার ভাই আজির উদ্দিন ও শরীফও হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে শিশুর ছুরিকাঘাতে আরেক শিশু নিহত
নিহত হোসেন মিয়ার মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের কবুতর কিনতে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে।’ তিনি ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আকসানের স্বজনরা প্রভাবশালী ও অর্থবিত্তের মালিক। এর আগেও আকসানের ছুরিকাঘাতের ঘটনা টাকা পয়সা দিয়ে সামাজিকভাবে শেষ করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় তিনি ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত।
নিহতের ভাই হাসান আলী বলেন, ‘আকসান ৫ বছর আগে পঞ্চম শ্রেণি পাস না করে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বখাটের খাতায় নাম লিখায়। সে স্মার্টফোনে টিকটক পাবজি ও ফ্রিয়ার গেইম খেলায় আসক্ত। এসব গেইমে বাজি ধরার সুযোগ রয়েছে সে বাজির টাকা জোগাড় করতে আমার ভাইকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। আমরা সে ও তার ভাইয়ের ফাঁসি চাই। আকসানের শারীরিক বয়স কম হলেও তার মানসিক বয়স প্রাপ্ত বয়স্কের মতো। স্বজনরা টাকা ও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে সে বেরিয়ে গেলে তার ভাইয়ের আত্মা শান্তি পাবে না।’