ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পরিচালক সিদ্ধার্থ পি মালহোত্রা বায়োপিকটি নির্মাণ করতে পুরোপুরি প্রস্তুত। এবার শুধু বাকি নায়ক -নায়িকা নির্বাচন। শোনা যাচ্ছে, মীনা কুমারীর চরিত্রে অভিনয় করছেন সদ্য মা হওয়া বলিউড অভিনেত্রী কিয়ারা আদভানি। মা হওয়ার পর এ সিনেমা দিয়েই বলিউডে কামব্যাক করবেন কিয়ারা।
তবে এখনো জানা যায়নি, মীনা কুমারীর স্বামী কামাল আমরোহীর চরিত্রে অভিনয় করা নায়কের নাম। বিগ বাজেটের সিনেমাটি প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে নির্মাতা বলেন,
কামাল সাহেব ও মীনা কুমারীর মধ্যে আদানপ্রদান হওয়া প্রায় পাঁচশো চিঠির উপর ভিত্তি করেই তৈরি হবে এ বায়োপিক। তাই এ সিনেমা নির্মাণের দায়িত্ব কয়েকশো গুণ।
ব্যক্তি জীবনে বাবা, সংগীতশিল্পী আলী বক্সের ইচ্ছাতে শোবিজ দুনিয়ায় পা রাখেন মীনা কুমারী। নায়িকার আসল নাম মেহজাবীন বানু। অভিনেত্রীরা ছিলেন তিন বোন-খুরশীদ, মীনা ও মধু। মেয়েদের পড়াশুনা করানো বাড়তি খরচ ভেবে স্কুল ছাড়িয়ে তিন মেয়েকেই শিশুশিল্পী হিসেবে শোবিজ দুনিয়ায় কাজে আনেন তাদের বাবা আলী বক্স।
কয়েক মাস পেরোতেই তিন মেয়ের উপার্জনে রাতারাতি দাদারের বস্তি থেকে ভারতের বান্দ্রার চ্যাপেল রোডের একটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে ওঠেন আলী বক্স। একসময় শারীরিক অসুস্থতার কারণে আলী বক্সের দ্বিতীয় স্ত্রী ইকবাল বেগম ফুসফুসের সমস্যায় নাচ ছাড়েন। আলী বক্সও ছেড়ে দেন সংগীতজীবন।

সংসারের হাল তখন একাই ধরেন মীনা কুমারী। সিনেমা জগতে হয়ে ওঠেন তুমুল জনপ্রিয়। অভিনয় দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ১৯৪১ সালে ‘বেহেন’ সিনেমায় সংগীতের প্রতি ভালো লাগা থেকে গেয়েছিলেন জীবনের প্রথম গান। শিল্পসত্ত্বা থাকায় লেখালেখিও শুরু করেছিলেন। ‘নাজ’ ছদ্মনাম ব্যবহার করে অসংখ্য শায়রী ও কবিতা লিখেছেন এ অভিনেত্রী।
অভিনেত্রীর জীবন বদলে যায় খ্যাতিমান সাহিত্যিক, চিত্রনাট্যকার, পরিচালক ও সংলাপ লেখক কামাল আমরোহীর সঙ্গে পরিচয়ে। তিনিই ছিলেন অভিনেত্রীর প্রথম প্রেমিক ও স্বামী। ১৯৫৩ সালে কামালকে গোপনে বিয়ে করেন মীনা। সংসার কীভাবে চলবে এই ভেবে মেয়ের বিয়েতে বাবা তখন রাজি নন। যে কারণে বাবার হাতে ২ লাখ টাকা তুলে দিয়ে নতুন সংসার শুরু করেন মীনা।
কামালের কাছে মীনা ছিলেন তার ‘স্বপ্নের নারী ও সৃষ্টির প্রেরণা’। যে কারণে প্রথম স্ত্রী ও সন্তানকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে মীনাকে বিয়ে করেন কামাল। কিন্তু সময় পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসার এ বিয়েতে জয়ী হতে শুরু করে অভিমান আর ইগো। প্রায়ই দাম্পত্য কলহ হতো কামাল-মীনার। যা এক সময় প্রকাশ পেতে শুরু করে ঘরের বাইরেও।
বিমল মিত্রের বাংলা উপন্যাস ‘সাহেব বিবি গোলাম’ অবলম্বনে নির্মিত ভারতীয় সিনেমা ‘সাহিব বিবি অউর গুলাম’র প্রিমিয়ার শোতে প্রথম সবার নজড়ে আসে তারকা দম্পতির কলহ। ১৯৬২ সালে মুম্বাইয়ের ইরোস সিনেমা হলে ‘সাহিব বিবি অউর গুলাম’র প্রিমিয়ার শো-য়ের আয়োজন করেছিলেন সোহরাব মোদী।
ওই অনুষ্ঠানে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের সঙ্গে আমরোহী দম্পতির পরিচয় করাতে গিয়ে সোহরাব বলেন,
ইনি প্রখ্যাত অভিনেত্রী মীনা কুমারী আর উনি তার স্বামী কামাল আমরোহী।
শুনে কামাল রাগে ফেটে পড়েন। বলেন,
আমি কামাল আমরোহী আর ইনি আমার স্ত্রী প্রখ্যাত অভিনেত্রী মীনা কুমারী।
কথাগুলো ছুড়ে দিয়েই তিনি হল ছেড়ে বেরিয়ে যান। এ ঘটনার ২ বছর পরই ১৯৬৪ সালের ৫ মার্চ এগারো বছরের দাম্পত্য সম্পর্ক চুকিয়ে স্বামীর বাড়ি ছাড়েন মীনা। তখন থেকেই বাড়তে থাকে অভিনেত্রীর মদ্যপান আর একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একাকিত্বের ওই সময় মীনার জীবনে আসেন অভিনেতা ধর্মেন্দ্র, রাজেন্দ্র কুমার, রাজ কুমারের মতো অভিনেতারা। ওই সময় অভিনেত্রী হিসেবে এত শক্তিশালী ছিলেন মীনা যে তিনি চাইলেই যে কাউকে শোবিজ দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন। ধারণা করা হয়, ধর্মেন্দ্র, রাজেন্দ্র কুমার, রাজ কুমারের সফল ক্যারিয়ার তৈরিতে অনেক সাহায্য করেছিলেন মীনা। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে একাকী পথে কাউকেই পাশে রাখেননি।
এদিকে ১৯৭২ সালে ‘পাকিজা’ সিনেমায় আবারও একসঙ্গে কাজ করার পরিস্থিতি তৈরি হয় কামাল-মীনার। ওই সময় পুরনো অভিমান ভুলে মীনার সাথে সখ্যতা তৈরির চেষ্টা শুরু করেন কামাল। তবে ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। ‘পাকিজা’ সিনেমা মুক্তির পরপরই মীনার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। সিনেমাটি দেখতে হলে যখন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে দর্শক তখন শারীরিক অসুস্থতায় হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েন মীনা। স্বামীকে আরও একবার বলিউড দুনিয়ায় খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিয়ে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে অতিরিক্ত মদ্যপানে লিভার সিরোসিসে মারা যান অভিনেত্রী।

আরও পড়ুন: ট্র্যাজিক নায়িকা ‘মধুবালার বায়োপিক’ আসছে, নায়িকা কে?
অভিনেত্রী মৃত্যুর আগে তার সব লেখা, কবিতা, ডায়রি গীতিকার গুলজারকে দিয়ে যান। অভিনেত্রীর মৃত্যুর পর ওই সব লেখা প্রকাশ করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন গুলজার। নিজেই লেখাগুলো সম্পাদনা করে ‘তানহা চাঁদ’ শিরোনামে নায়িকার বই প্রকাশিত করেন।
ওই সব লেখা ছাড়াও জীবিত অবস্থায় স্বামীকে অসংখ্য চিঠি লিখেছেন মীনা। এসব লেখার ওপর ভিত্তি করেই মীনা কুমারীর বায়োপিক নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্মাতা। আশা করা হচ্ছে, নতুন বছরের প্রথমদিকেই শুরু হবে সিনেমাটির শুটিং।
আরও পড়ুন: ডনকে ছাড়া ভাতও খেতেন না সালমান শাহ: সাইফুল
প্রসঙ্গত, ষাটের দশকে সিনেপ্রেমী ভক্তদের মনে রাজত্ব তৈরি করেছিলেন মীনা কুমারী। তার জনপ্রিয় সিনেমার মধ্যে রয়েছে 'পাকিজা', 'সাহিব বিবি অউর গুলাম', 'বৈজু বাওরা', 'ফুল অর পাথর', 'দো বিঘা জমিন', ‘মেরে আপনে’, ‘মিস মেরি’, ‘মেম সাহেব’, ‘সাভেরা’ ইত্যাদি।
]]>
২ সপ্তাহ আগে
৩







Bengali (BD) ·
English (US) ·