শান্ত দুপুর। দূরে নৌকার সারি, মাঝির গলার সুরে মিশেছে জলতরঙ্গের কলতান। বুড়িগঙ্গা যেনো এক জীবন্ত সত্ত্বা।
তবে শ্বাস আটকে দিনের পর দিন নদী হারাচ্ছে তার রুপ। শতাব্দী ধরে ঢাকার জীবন, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুর কেন্দ্র ছিলো এই বুড়িগঙ্গা। জল ছিলো টলটলে। তবে নগরায়ন, শিল্পবর্জ্য আর অবহেলায় এক সময়ের জৌলুস আজ যেনো কেবলই দূষণের প্রতীক। কালের বিবর্তনে যে কয়েকটি বেঁচে আছে, সেগুলোও রয়েছে অস্তিত্ব সংকটে।
কোথাও পানি হয়েছে কৃষ্ণবর্ণ, ঘোলা ও দুর্গন্ধময়। আবার কোথাও জাগছে অসংখ্য ডুবোচর, ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ।
জেলেরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের ময়লার কারণে এমন অবস্থা হয়েছে। দুর্গন্ধে নদীতে টেকা যায় না। কান চেপে ধরে দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব না।
নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, ঢাকা সিটির সব ময়লা এখানে। কিছু ময়লা নদীর কিনারায় থেকে থেকে নদী ভরাট হয়ে গেছে। পরে ডেভলপাররা এসব জায়গা ভরাট করে প্লট করে বিক্রি করছে।
আরও পড়ুন: দখল-দূষণে পীরতলা খাল এখন ময়লার ভাগাড়
প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর দখল করে নদীর সীমানার ভেতর তৈরি করা হয়েছে আবাসন প্রকল্প। তীরবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে এমন শত শত জমি কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান। নদী শুকিয়ে হয়েছে খাল, খাল শুকিয়ে নর্দমা; পরিণাম নগরে জলাবদ্ধতা।
বাসিন্দারা জানান, যে যেমন পারছে নদী দখল করছে, ঘরবাড়ি বানাচ্ছে। আর জলাবদ্ধতা থেকে বেড়েছে মশার উৎপাত।
পরিবেশবিদরা বলছেন, ঢাকার চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পাঁচ নদী সিএস দাগ অনুযায়ী সংরক্ষণ ও উদ্ধার করার জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় নদীর এই দশা।
পরিবেশবিদ অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, ‘প্রথমে নদীকে সিটি করপোরশনের ডাম্পিং সাইড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে সে ডাম্পিং সাইডের পাশে কোনো সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দিয়ে টিনশেড অফিস হতে দেখা যায়। পরের ৫-৬ বছরে সেটি পাকা বিল্ডিং হতে দেখা যায়, এবং বহুতল ভবনেও রূপান্তর হয়। এর মাধ্যমে নদী দখলটা পাকাপোক্ত হয়ে যায়।’
জলাধার আইন প্রয়োগের অভাবে পিলার স্থাপনের পরের অংশগুলো ভরাট করছে অসাধু আবাসন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজন উচ্ছেদ পরবর্তী কর্মসূচীর সঠিক বাস্তবায়ন. বলছে বিআইডব্লিউটিএ।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, ‘নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে পিলার দিয়ে। পিলারের পাশে জলাধার রয়েছে। জলাধার রক্ষায় যেসব আইন রয়েছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সে আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। তা নাহলে অসাধু মহল সেসব জলাধার ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলবে।’
আরও পড়ুন: পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে পাহাড়ে, পানি দূষণের শিকার শতাধিক পরিবার
শুধু দখল নয় সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনার অভাবে নদীতে পলি জমে কমেছে নাব্য। পরিবেশ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ঢাকার চারটি নদীসহ সারাদেশের ২০টি নদী রক্ষা প্রকল্পের কাজ চলমান।
পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যদি সময় মতন সব অনুমোদন পাওয়া যায়, তাহলে আশাকরি ২০টা নদীর কাজ শুরু করা যাবে।’
বিআইডব্লিউটিএ আরও বলছে , বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণে আগামী ডিসেম্বরে নামানো হবে গ্রাব ড্রেজার। তবে বড় চ্যালেঞ্জ ময়লা ডিসপোজাল, যাতে দরকার সিটি করপোরেশনের সহায়তা।