শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে চুক্তির অনুমোদন দেয়া হয়। পরে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভার প্রায় সাত ঘণ্টার বৈঠকে এর চূড়ান্ত অনুমোদন হয় বলে জানিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দফতর।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলের সরকার একটি যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি চুক্তি অনুমোদন করেছে। এরফলে রোববার থেকে চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে।
এরআগে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করে ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ভোটাভুটির পর চুক্তি অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানায় আল জাজিরা।
তখন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সমস্ত রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও মানবিক দিক পর্যবেক্ষণের পর এবং প্রস্তাবিত চুক্তি যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনকে সমর্থন করে’ এটা বোঝার পর চুক্তিটি গ্রহণ করেছে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা।
আরও পড়ুন: গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন: ডব্লিউএইচও
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ‘সরকারকে প্রস্তাবিত রূপরেখা অনুমোদন করার’ সুপারিশও করেছে।
যে প্রক্রিয়ায় হলো চুক্তি
যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতায় টানা ১৫ মাসের সংঘাতের পর বুধবার (১৫ জানুয়ারি) গাজায় দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে একমত হয় ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। কাতারি ও মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।
হামাস প্রায় সঙ্গে সঙ্গে চুক্তি অনুমোদন করলেও বিলম্বিত করে ইসরাইল। চুক্তি অনুমোদনে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) মন্ত্রিসভার বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে ‘শেষ মুহূর্তে সংকট’ তৈরি করছে বলে অভিযোগ করে বৈঠক পিছিয়ে দেন।
প্রাণ গেল ৪৭ হাজার
এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হওয়ার পর শেষ মুহূর্তেও গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। গত দুইদিনে গাজাজুড়ে অন্তত ১১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ২৮ জন শিশু এবং আরও ৩১ জন নারী।
আরও পড়ুন: থেমেছে ফিলিস্তিনের কান্না, ফিরে আসবে কি মৃতরা?
এতে গত ১৫ মাসে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন। নতুন করে ১৮৯ জন আহত নিয়ে মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার৬৪২ জনে।
যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তি
রয়টার্স জানায়, চুক্তিতে ছয় সপ্তাহের তথা ৪২ দিনের একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
চুক্তির শর্তের মধ্যে রয়েছে, গাজা উপত্যকা থেকে ধীরে ধীরে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার করা হবে এবং হামাসের হাতে আটক বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদেরও মুক্তি দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: বিদায় বেলায় বিক্ষোভের মুখে বাইডেন, ‘যুদ্ধাপরাধী’ স্লোগান
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ৩৩ জন ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস, যাদের মধ্যে নারী, শিশু ও ৫০ বছরের বেশি বয়সি পুরুষ রয়েছেন।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ কার্যকরের বিষয়ে আলোচনা প্রথম ধাপের ১৬তম দিনের মধ্যে শুরু হবে। সেখানে অবশিষ্ট সব ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
তৃতীয় ধাপে অবশিষ্ট মৃতদেহগুলোর ফেরত দেয়া এবং গাজা পুনর্গঠনের কাজ শুরুর কথা রয়েছে। এই কাজ মিশর, কাতার ও জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।