২০ বছরের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে পড়ে থাকা জরাজীর্ণ কনটেইনার বন্দরকে যেমন দুর্ঘটনা ঝুঁকিতে ফেলছে, তেমনি দখল হয়ে আছে বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বারবার চিঠি দেয়া হলেও মামলাসহ নানা জটিলতায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ শত শত কোটি টাকা মূল্যের পণ্য বোঝাই এসব কনটেইনারের নিলাম করতে পারছিল না।
এ অবস্থায় বন্দরের নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে দ্রুত নিলাম এবং বিপজ্জনক পণ্য ধ্বংসের বিশেষ আদেশ জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে এসব পণ্য বন্দরে পড়ে রয়েছে। এই অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব পণ্য বন্দর থেকে অপসারণ করা যাবে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বন্দরে অখালাসকৃত পণ্য দ্রুত নিলামে বিশেষ আদেশ জারি
বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য ৩০ দিনের মধ্যে ছাড় করা না হলে নিলামে বিক্রির জন্য কাস্টমসের কাছে বাই পেপার হস্তান্তর করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস ধারণ ক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে কনটেইনার রয়েছে ৪০ হাজার ৭০৮ টিইইউএস। এর মধ্যে দীর্ঘদিনের নিলামযোগ্য কনটেইনার রয়েছে ১০ হাজারের বেশি। অথচ বন্দরের ৩০ শতাংশ জায়গা খালি রাখতে হয় কনটেইনারবাহী লরি ও পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান চলাচলের জন্য। তবে নিলাম জটিলতায় কনটেইনারগুলো আটকা পড়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
আগে যে কোনো পণ্য নিলামের ক্ষেত্রে কাস্টমসের বেঁধে দেয়া দরের ৬০ শতাংশের বেশি বিড করতে হতো ব্যবসায়ীদের। কিন্তু এর চেয়ে দর কম হলে আরও দুইবার নিলামের সুযোগ থাকতো। ফলে নিলামে দীর্ঘসূত্রতায় আটকে যেতো সব ধরনের পণ্য। তবে বিশেষ আদেশ অনুযায়ী প্রথম নিলামেই সর্বোচ্চ দরদাতা পেয়ে যাবে নিলামে তোলা পণ্য।
চট্টগ্রাম কাস্টমস বিডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব চৌধুরী বলেন, সর্বোচ্চ দরদাতা হয়ে পণ্য কেনা গেলে দ্রুত পণ্য খালাস করা যাবে। এতে বিডাররা যেমন পণ্য পাবে, তেমনি বন্দরও জটমুক্ত হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস বিডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস আলম বলেন, নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে বন্দর জটমুক্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিশেষ আদেশ পেয়েই নড়ে-চড়ে বসেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের নিলাম শাখা। প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে নিলামে পণ্য বিক্রির তোড়জোড়। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এসব কনটেইনার ভর্তি পণ্য নিলামে বিক্রি করতে চায় তারা।
আরও পড়ুন: কেমিক্যাল মুক্ত হবে চট্টগ্রাম বন্দর!
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সহকারী কমিশনার সাকিব হোসেন বলেন, আদেশ জারি না হলে এই জট কবে মুক্ত হত, তা বলা মুশকিল। ৫-৬ বছরও লাগতে পারত। তবে আদেশটি জারি হওয়ায় ৬ মাসের মধ্যে বিপুল সংখ্যক কনটেইনার নিলামের মাধ্যমে খালাস করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বন্দরের বিভিন্ন শেড ও ইয়ার্ডে ১ হাজার ৮৩৫টি ২০ ফুট এবং ৩ হাজার ৮০৬ টি ৪০ ফুট সাইজের পণ্য বোঝাই কনটেইনার এবং কয়েক হাজার মেট্রিক টন বাল্ক পণ্য রয়েছে নিলামের অপেক্ষায়। এর বাইরে ৪০০টির বেশি কেমিক্যাল বোঝাই কনটেইনার বন্দরকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
]]>