ফুলবাড়িয়া পৌরসভার হাসপাতাল রোডের বাসিন্দ নিমাই চন্দ্র ঋষির ছেলে বিনন্দ ঋষি। নিমাই চন্দ্র কামারের কাজ করে জীবন চালান। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে পঞ্চম বিনন্দ ঋষি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, বিনন্দ অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠছিল। তার বয়স যখন তিন বছর তখন হঠাৎ মুখে এক ধরণের ঘা দেখা দেয়। তার পর থেকে ক্রমাগত মুখ থেকে লালা পড়তে শুরু করে। কিন্তু তার চিকিৎসা করাতে পারেনি পরিবার। ধীরে ধীরে সমস্যাটি ঠিক হয়ে যাবে পরিবার ভাবলেও বিনন্দ দিনদিন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। নিজের বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর, অন্যের বাড়িতে গিয়ে জিনিসপত্রের ক্ষতিকরা এবং বাড়ি থেকে চলে যতো। ছেলের পাগলামীর কারণে ছয় বছর বয়স থেকে তাকে শিকলে বন্দী করে রাখতে শুরু করে। আর রাতের বেলায় ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। শিকল ছাড়া থাকলে সে বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়, পরে খোঁজে আনতে হয়।
আরও পড়ুন: বাড়ি তো নয়, যেন পাগলাগারদ
মা চাম্মুনি ঋষি বলেন, ‘ছেলের যখন ৪ বছর তখন থেকেই তার আচরণ কেমন জানি অস্বাভাবিক হয়ে উঠে। সারাদিন শুধু চিল্লাচিল্লি করে। মানুষরে মারধর করে, ভাংচুর করে, বাড়ি থেকে চলে যায়। ওই অবস্থায় ছেলেকে শিকল দিয়ে রাখি, তা না হলে সে কোথায় চলে যাব পরে খোঁজে পাব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ছেলের চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ আমাদের নাই। তাই বাধ্য হয়ে বাইন্ধা রাখি। ছেলেরে বাইন্ধা রাখতে কষ্ট হইলেও আমরা নিরূপায়।’
বাবা নিমাই চন্দ্র ঋষি বলেন, ‘কামারের কাজ করে কোনো মতন সংসার চলে। ছোটবেলায় ছেলে অসুস্থ হলে পয়সার জন্য কোন চিকিৎসা করাতে পারি নাই। মনে করেছিলাম বড় হয়ে সুস্থ হয়ে উঠবে, কিন্তু বড় হলে তার সমস্যা আরও বাড়ছে। ছেলেরে অত্যাচারের কারনে তাকে বাইন্দা রাখতে হয়। দিনে বান্ধা থাহে ঘরের বাইরে, রাইতে ঘুমেও ওষুধ খাওয়া রাহন লাগে। ফার্মেসী থাইক্যা ঘুমের বড়ি কিইন্যা আনি।’
তিনি আরও বলেন, টাকা পয়সার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারতেছি না। সরকারিভাবে চিকিৎসার কোন সুযোগ থাকলে তা ব্যবস্থার আবেদন জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ৭ বছর ধরে শিকলে বন্দি নূরের জীবন!
স্থানীয় বাসিন্দা শামীম আহম্মেদ বলেন, ‘ছেলেটি মানসিকভাবে ভারসম্যাহী হওয়ার পর থেকেই শিকলে বন্দী অবস্থায় কাটাচ্ছে। বছরের দুয়েক আগেও শারীরিক ভাবে ছেলেটা হৃষ্টপুষ্ট ছিল, এখন দিনদিন শরির শুকিয়ে আগের চেয়ে অনেকটাই ছোট হয়েগেছে। ছেলেটি যদি উন্নত চিকিৎসা পেতো তাহলে এতদিনে সুস্থ হয়ে উঠতো। কিন্তু বিনন্দের পরিবারটি খুবই দরিদ্র, সরকারি সহায়তায় তার চিকিৎসা করা হলে খুবই ভালো হতো।’
এ ব্যাপারে ফুলবাড়িয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমরা শিকলে বন্দি তরুণের খোঁজ নেব। স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য পরিবার নিয়ে গেলে আমরা আর্থিক সহযোগিতাও করবো। এছাড়া যদি উন্নত চিকিৎসার জন্য পাবনা বা অন্য কোথাও নিতে হয় সে ক্ষেত্রে যে ধরণের সহযোগিতা করা দরকার তা করা হবে।’