চাকরি ছেড়ে কাঁকড়া চাষ, সফল সজীব এখন ৩৭ জনের ভরসা

৭ ঘন্টা আগে
কপোতাক্ষ নদের পাড় সংলগ্ন ঘেরের পানিতে ভাসছে প্লাস্টিকের ছোট ছোট অনেক বক্স। ঘেরের মাঝ বরাবর বাঁশ আর কাঠ দিয়ে বানানো টিনের ছাউনি দেয়া টংঘর। সেই ঘরের কাঠের পাটাতনের ওপর বসে কয়েকজন প্লাস্টিকের বক্সগুলো খুলে দেখছেন। কৌতূহল সৃষ্টিকারী এসব বক্সের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে কাঁকড়া। আর এ কাঁকড়া রফতানি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, চীন, মালয়েশিয়া ও জাপানের মতো দেশে।

ঘেরটির মালিক যশোরের কেশবপুরের আব্দুল্লাহ আল মামুন সজীব। কেবল শখের কারণে ৫০ হাজার টাকা বেতনের কর্পোরেট এক্সিকিউটিভের চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হতে চাষাবাদ শুরু করেছেন তিনি।

 

আব্দুল্লাহ আল মামুন সজীব বলেন, ২০১৮ সালে যমুনা গ্রুপ থেকে যখন চাকরি ছেড়ে আসি পরিবারের লোকজন মেনে নিতে পারেনি। মূলত ছোট বেলা থেকে কৃষির প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ ছিল। সে ভালো লাগাটা কখনো ছাড়তে পারিনি। সবসময় চাষাবাদের প্রতি একটো ঝোঁক ছিল। প্রথমে মুরগি চাষ শুরু করি। ব্যর্থ হয়ে ফলের বাগান করি। জাত সিলেকশনে ভুল করায় সফলতা পাইনি। পরে আবারো নতুন করে ফলের বাগান শুরু করলে মুনফা হয়। দুই বছর পর সেই টাকা দিয়ে মাছের চাষ শুরু করি। সাদা মাছ থেকে আস্তে আস্তে চিংড়ি মাছের ঘের করি। এরপর কাঁকড়া চাষে আসি।

 

আরও পড়ুন: রাঙ্গাবালীর জেলেদের জীবনে কাঁকড়া হয়ে উঠছে প্রধান আয়ের উৎস

 

উদ্যোক্তা সজীব আরও বলেন, কেশবপুরে কপোতাক্ষ নদ ছাড়া লবণ পানির জোগান নেই। আমরা শিলা স্রেটা কাঁকড়া চাষ করি। এটার জন্য লবণাক্ত পানি জরুরি। আমরা বাচ্চা কাঁকড়া সংগ্রহ করি না। দেশে বিদ্যমান ১৭ গ্রেডের কাঁকড়ার মধ্যে মাত্র দুটি গ্রেডের চাষাবাদ করি। যা সংগ্রহ করা হয় সুন্দরবন সংলগ্ন নদী থেকে। এরপর ২৫ দিনের পরিচর্যা শেষে তা রফতানি করা হয়।

 

হার্ডশেল কাঁকড়া কিনে সফটশেল তৈরি করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি কেজি হার্ডশেল কাঁকড়া ৭শ' টাকা কেজি দরে কিনে ২৫ দিন পরিচর্যা করা হয়। এর মধ্যে কাঁকড়া নতুন খোলস গ্রহণ করে। এই সফটশেল কাঁকড়া বিভিন্ন প্রসেসের মাধ্যম রফতানিযোগ্য করা হয়।

 

সজীব জানান, কাঁকড়া প্রজেক্টটি ৯ বিঘা আয়তনের। এর মধ্যে ৫ বিঘায় প্রায় ৭০ হাজার বক্সে সফটশেল কাঁকড়া চাষ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪ বিঘাতে সনাতনী পদ্ধতি চাষ হচ্ছে হার্ডশেল কাঁকড়া। এখানে চাষ করা কাঁকড়া যাচ্ছে দেশের পাঁচ তারকা হোটেলসহ অস্ট্রেলিয়া, চীন, মালয়েশিয়া ও জাপানের মতো রাষ্ট্রে।

 

এর মাধ্যমে নিজে যেমন‌ স্বাবলম্বী হয়েছেন, তেমনি কর্মসংস্থান করেছেন ৩৭ জনের। সজীব বলেন, আমরা যে কাঁকড়া চাষ করি তার বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমার মতো অনেকেই কাঁকড়া চাষ করছেন। সরকার যদি কাঁকড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে সহযোগিতা করে তাহলে এ শিল্পের প্রসার ঘটবে। যার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

 

আরও পড়ুন: সামুদ্রিক কাঁকড়া শিকারে সোনালী সম্ভাবনা

 

কাঁকড়ার ফার্মে কর্মরত শ্রমিক সচীন মণ্ডল বলেন, বাক্সে কাঁকড়া চাষের জন্য ঘেরটি পাঁচ-ছয় ফুট গভীর করে খনন করা হয়েছে। ঘেরে কোনো ধরনের সার ব্যবহার করা হয় না। পানির ওপরে প্লাস্টিকের বক্স সাজিয়ে তাতে মাঝারি আকারের একটি করে কাঁকড়া দেয়া হয়েছে। কাঁকড়াগুলো বক্সে ভরার সময় কাঁকড়ার শুধু বড় দুটি পা রেখে ছোট পাগুলো কেটে দেয়া হয়েছে। এতে কাঁকড়া দ্রুত খোলস ছেড়ে নরম হয়। আর এসব কাঁকড়াকে খাদ্য হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ২ মণ তেলাপিয়া মাছ কেটে খাওয়ানো হয়।

 

সজিবের ঘেরে কর্মরত জলিল মিয়া বলেন, নতুন এ চাষাবাদের কারণে আমরা ৩৭জন চাকরি পেয়েছি। আমাদের সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা বেতন। খামারে চাকরির পাশাপাশি বাড়ির কাজকর্ম, চাষাবাদ সবকিছু করতে পারছি। ফলে পরিবার নিয়ে ভালো আছি।

 

কেশবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস জানান, কেশবপুর উপজেলা সদরের বাসিন্দা উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন সজীব কাঁকড়ার খামার করেছেন। তবে সেটা কপোতাক্ষ নদের ওপাড়ে সাতক্ষীরা তালা উপজেলার মধ্যে পড়ে। আমরা তার খামার দেখতে যাব। এ ধরনের খামার তৈরিতে নতুন উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন