এই ধারণাটি কেন মায়ারস নামক একজন জনসংখ্যা বিশ্লেষকের (population analyst) তৈরি। তিনি ২০১৩ সালে প্রথম এই বৃত্তের ধারণা দেন, যেটিকে “Most Populated Circle” বা পরে “Yuxi Circle” বলা হয়।
আধুনিক ভূগোলবিদদের কাছে এখন এটি বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
এই বৃত্তের মধ্যে কারা রয়েছে?
‘ইউশি সার্কেল’-এর মধ্যে পড়ে এশিয়ার জনবহুল কিছু দেশ, যার মধ্যে রয়েছে: চীন (প্রায় ১৪০ কোটির বেশি মানুষ), ভারত (প্রায় ১৪০ কোটির কাছাকাছি), ইন্দোনেশিয়া (২৮ কোটির বেশি), বাংলাদেশ (১৭ কোটিরও বেশি), জাপান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তানসহ আরও অনেক দেশ।
বৃত্তটি পৃথিবীর মাত্র ১০ শতাংশ ভূমিজুড়ে বিস্তৃত, অথচ এখানেই বাস করে পৃথিবীর ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ, যার সংখ্যা ৪০০ কোটিরও বেশি!
এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য কী?
এই এলাকাকে বলা হয় “বিশ্বের জনসংখ্যার কেন্দ্র”। এখানে শুধু মানুষ নয়, রয়েছে হাজার বছরের পুরনো সভ্যতা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, কৃষিভিত্তিক সমাজ, শিল্পায়ন, প্রযুক্তির বিকাশ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। জনসংখ্যার ঘনত্ব, দ্রুত নগরায়ণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন এই অঞ্চলকে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু করে তুলেছে।
গবেষকদের দৃষ্টিতে 'ইউশি সার্কেল'
এই বৃত্ত জনসংখ্যার অসম বিতরণের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ প্রতীক। জনসংখ্যার চাপের কারণে এই অঞ্চলগুলোতে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ বেড়েছে, যা বৈশ্বিক পরিবেশের ওপরও প্রভাব ফেলছে।
এই সার্কেলটি শুধু পরিসংখ্যান নয়, বরং এটি উন্নয়ন পরিকল্পনায় দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সাহায্য করে। কারণ, অর্ধেক পৃথিবীর মানুষের জীবন, খাদ্য, পানি, বাসস্থান এবং কর্মসংস্থানের প্রশ্ন এখানে কেন্দ্রীভূত।
পরিবেশের ওপর প্রভাব
এত ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে, যা প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় অনেক বেশি জনবহুল, সেখানে পরিবেশ দূষণের হার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যেমন:
বায়ু দূষণ: দিল্লি, ঢাকা, বেইজিং, জাকার্তার মতো শহরগুলো বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন: অতিরিক্ত শিল্পায়ন, যানবাহন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে।
জল দূষণ ও সংকট: নদী-নালা, ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের চাপে পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে।
জমি দখল ও বন ধ্বংস: শহর সম্প্রসারণ ও কৃষি চাপে বন উজাড় বেড়েই চলেছে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে টেকসই উন্নয়নের পথে রূপান্তরিত করা। এখানেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা বাজার, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী, এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতি। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য এটি একদিকে যেমন চাপ, অন্যদিকে তেমনি বিশাল সম্ভাবনার দরজা।
‘ইউশি সার্কেল’ আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়—বিশ্বের অর্ধেক মানুষের গল্প, সংগ্রাম ও সম্ভাবনা এই একটি বৃত্তের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় এ অঞ্চলকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ব নেতাদেরকে একসাথে ভাবতে হবে, যাতে এই জনসংখ্যা অভিশাপ না হয়ে আশীর্বাদে পরিণত হয়।
তথ্যসূত্র: গবেষণা ও ভৌগোলিক পর্যালোচনা