গত শনিবার আরবি লাইপজিগের মাঠে জয় পেলেই বায়ার্ন মিউনিখের বুন্দেস লিগা জয় নিশ্চিত হয়ে যেত। কিন্তু উত্তেজনায় ঠাঁসা ম্যাচে বায়ার্ন ৩-৩ গোলে ড্র করে লাইপজিগের সঙ্গে। প্রথমার্ধে বেঞ্জামিন সিকো ও লুকাস ক্লোস্টারমানের গোলে এগিয়ে গিয়ে জয়ের স্বপ্নই দেখছিল লাইপজিগ। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে এরিক ডায়ের ও মাইকেল ওলিসের গোলে সমতা ফেরায় বায়ার্ন। এরপর লেরয় সান গোল করলে শিরোপার সুবাস পাওয়া শুরু করে দিয়েছিল কেনের দল। কিন্তু ম্যাচের যোগ করা সময়ে ইয়োসেফ পোলসেন পাগলাটে এক গোল করে বায়ার্নের শিরোপা উৎসবে পানি ঢেলে দেন।
তবে তাতে বায়ার্নের শিরোপা উৎসব মাত্র একদিনই পিছিয়েছে। গতকাল রোববার (৪ মে) বায়ার লেভারকুসেন এসসি ফ্রেইবুর্গের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করায় বুন্দেসলিগার এই মৌসুমের শিরোপা বায়ার্নের ঘরে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে গেছে। এদিন ৪৪ ও ৪৮ মিনিটে ম্যাক্সিমিলিয়ান এগেস্টাইন ও পিয়েরো হিনক্যাপি গোল করে ফ্রেইবুর্গকে এগিয়ে দেন। দ্বিতীয়ার্ধের ৮২ মিনিটে ফ্লোরিয়ান রিটিজ ও যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে জোনাথন টাহ গোল করে লেভারকুসেনের হার ঠেকান।
তাতে ২ ম্যাচ হাতে রেখেই বায়ার্নের শিরোপা জেতা নিশ্চিত হয়।
আরও পড়ুন: লেভারকুসেনের ড্রয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধার করল বায়ার্ন
গত মৌসুমে টটেনহ্যাম থেকে বায়ার্নে যোগ দেয়ার পর চলতি মৌসুমেই শিরোপার দেখা পেলেন ইংলিশ স্ট্রাইকার হ্যারি কেন। এটি তার পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারেরই প্রথম শিরোপা।
অথচ একটা শিরোপার জন্যই কেনকে ইংল্যান্ড ছেড়ে জার্মানিতে যেতে হয়েছে। সিনিয়র ক্যারিয়ারের ১৫ বছর, ৬টি ফাইনাল এবং ৬৯৪ ম্যাচ খেলার পর প্রথম শিরোপার স্বাদ পেয়েছেন হ্যারি কেন। একটা শিরোপা জেতার আগেই ক্যারিয়ারে ৪৪৭টি গোল করে ফেলেছেন প্রজন্মের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার।
১৩ বছর আগে টটেনহ্যাম হটস্পারে যোগ দেয়ার পর একবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে দলকে তুলেছেন তিনি। দুবার খেলেছেন লিগ কাপের ফাইনাল। ক্লাবটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের মালিক হয়েছেন। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে ১০ বছরের ক্যারিয়ারে দুবার হেরেছেন ইউরোর ফাইনাল। বিশ্বকাপেও জিতেছেন সর্বোচ্চ গোলদাতার গোল্ডেন বুট। লিগ বাদেও ক্যারিয়ারে মোট ৬টি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলে একটাও জিততে পারেননি তিনি। কিন্তু শিরোপা কোনো না কোনোভাবে তাকে ফাঁকি দিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: বিপিএলের পারফরম্যান্সের কোনো মূল্যই কি নেই বিসিবির কাছে?
বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দেয়ার পর হ্যারি কেনের এই অভিশাপের ব্যাপারটা আরও বেশি আলোচিত হয়েছে। এমনিতে বুন্দেসলিগার শিরোপাটাকে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে রাখা বায়ার্ন গত মৌসুমে কেনকে দলে ভেড়ানোর পরেই লিগ তো বটেই, একটা শিরোপাও জিততে পারেনি। জার্মান সুপার কাপের ফাইনালে উঠলেও হেরে গেছে তার দল। সমর্থকরাও কেনের এই অভিশাপ নিয়ে বেশ কানাঘুষা করতে শুরু করে। ইংল্যান্ড থেকে সঙ্গে কর ব্যাভেরিয়ানদের জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে নিয়ে আসছেন।
অবশেষে শিরোপা কেনের হাতে ধরা দিল। পরম আকাঙ্ক্ষিত শিরোপা নিয়ে এই ইংলিশের উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনা নজর কেড়েছে সবার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক পোস্ট করে সেই উচ্ছ্বাস সমর্থকদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন তিনি। কোনো ভিডিওর ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন’। আরেকটিতে লিখেছেন, ‘একসঙ্গে জিতেছি, একসঙ্গে উদ্যাপন করছি’; আর ছবির অ্যালবামের ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘কী অসাধারণ অনুভূতি।’
ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপার স্বাদ পাওয়া হ্যারিকেন কী তার এই প্রাপ্তির পথ ধরেই হাঁটতে চাইবেন নাকি এখানেই থেমে যাবেন? সময়ই জানাবে।