সাড়ে চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেন মুন্সিগঞ্জ সদরের বাঘেশ্বর গ্রামের জহিরুল হক। উৎপাদন খরচ ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা, পেয়েছেন প্রায় ৫শ মণ আলু। প্রতিমণে খরচ প্রায় ৬৩৬ টাকা। তবে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। মণ প্রতি লোকসান দুইশ থেকে আড়াইশ টাকার মতো।
তিনি বলেন, বীজ থেকে শুরু করে কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া। সবকিছুর দাম বেড়েছে। তবে আলুর দাম একদম পড়ে গেছে। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই ক্ষেতেই আলু সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছি।
আরও পড়ুন: এবার আলু সংরক্ষণ হবে অহিমায়িত ঘরেই!
ন্যায্য দাম না পাওয়া ও হিমাগার খরচ বাড়ায় জমিতেই আলু সংরক্ষণ করছেন জহিরুলের মতো অনেকেই। ঝুঁকি আছে নষ্ট হওয়ার। সরকার নির্ধারিত ৬.৭৫ টাকা ফিতে ৫০ কেজি আলুর বস্তা ৯ মাস হিমাগারে রাখার খরচ ২৮০ থেকে ৩৩৭ টাকা। আরও আছে জমি থেকে আলু তোলা এবং হিমাগার পর্যন্ত নেয়ার খরচ।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হিমাগার ব্যবস্থাপক জানান, ৫০ কেজির এক বস্তা আলু হিমাগারে রাখতে খরচ মাত্র ২০০-২২০ টাকা। সে হিসেবে কৃষকের কাছ থেকে মালিকরা ৪০ থেকে ৫৩ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করছেন।
তবে হিমাগার মালিকদের দেয়া খরচের ফর্দ বলছে, ব্যাংকঋণ, জ্বালানি, শ্রমিক মজুরির সঙ্গে অন্যান্য ব্যয় ও ১৫ ভাগ মুনাফা ধরে প্রতি কেজিতে তাদের খরচ ৯.৬২ টাকা। তাতে সরকার নির্ধারিত ৬.৭৫ টাকা খরচে তাদের লোকসান হচ্ছে।
কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক গোলাম সারওয়ার বলেন, গত বছর ব্যাংকের সুদের হার ছিল ৯ শতাংশ, যা এ বছর বেড়ে হয়েছে ১৫ শতাংশ। এছাড়া আলু সংরক্ষণের পর ৫-৬ মাস কোনো মুনাফা হয় না। কারণ তখন আলু হিমাগারেই থাকে। তাই এ বছর হিমাগারের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে কৃষি মন্ত্রণালয় ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে ৬ টাকা ৭৫ পয়সা। যা গত বছরের চেয়ে ২৫ পয়সা কম।
আরও পড়ুন: জেলায় নেই কোল্ডস্টোরেজ, আলু নিয়ে বিপাকে বরগুনার চাষিরা
হিমাগার মালিকরা জানান, আগে কৃষকদের প্রতি বস্তায় ৬৫ থেকে ৮৫ কেজি পর্যন্ত আলু সংরক্ষণ করার সুযোগ দিলেও এখন তারা ৫০ কেজির বেশি সংরক্ষণের সুযোগ দিচ্ছেন না।
হিমাগারে জায়গা না পাওয়া আর পেলেও অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগে আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না মুন্সিগঞ্জ জেলার হাজারো কৃষক। যার কারণে অস্থায়ীভাবে আলু সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন তারা। তাদের দাবি, এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
]]>