হাসিনার বিরুদ্ধে রায় কেন ভারতকে জটিল পরিস্থিতিতে ফেলেছে?

১ সপ্তাহে আগে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে দিল্লির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা। হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই রায় ভারতকে এক জটিল পরিস্থিতিতে ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন হাসিনার জন্য আরেকটি প্রত্যর্পণের অনুরোধ জারি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যিনি ২০২৪ সালের আগস্টে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন।

 

ঢাকার এ সংক্রান্ত পূর্ববর্তী দাবিগুলোর প্রতি ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়া দেয়নি। তবে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত যদি মনে করে যে হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ রাজনৈতিক প্রকৃতির কিংবা সরল বিশ্বাসে করা হয়নি, তাহলে তারা প্রত্যর্পণের অনুরোধ (ঢাকার) প্রত্যাখ্যান করতে পারে।

 

বিবিসি বলছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। এছাড়া হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত না পাঠানোর বিষয়ে ভারতে রাজনৈতিক ঐকমত্যও রয়েছে। 

 

আরও পড়ুন: ‘হাসিনাকে হস্তান্তর করবে না ভারত’

 

দিল্লির জন্য, বাংলাদেশ কেবল একটি প্রতিবেশী দেশ নয় - এটি কৌশলগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভারতের সীমান্ত সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে।

 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ বিষয়ে ভারত এক জটিল পরিস্থিতির মুখেই পড়েছে। কারণ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে অস্বীকৃতি জানানোকে ‘কূটনৈতিক অবজ্ঞা’ হিসেবে দেখা হতে পারে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও খারাপ করে তুলবে।

 

এদিকে ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশীয় স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেছেন, হাসিনার বিরুদ্ধে আদালতের রায় প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু ভারত পলাতক সাবেক বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রীকে হস্তান্তর করবে না।

 

হাসিনার মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশিত ছিল বলেও মনে করেন তিনি। খবর আল জাজিরা’র। 

 

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড: আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে যা বললো ভারত 

 

শ্রীরাধা দত্তের মতে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা একমত যে বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেশের আইনি ব্যবস্থা অনুসরণ করে পরিচালিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দেশটির পরিস্থিতি দেখেছে সবাই। সবার আশা ছিল, তার (শেখ হাসিনা) বেশ কঠোর বিচার হবে।’

 

জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘নিরস্ত্র ছাত্রদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে কারও সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী (তৎকালীন) যে সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার প্রমাণ আছে।’

 

‘আওয়ামী লীগ একটি পাল্টা বর্ণনা তৈরি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাংলাদেশিদের বিশ্বাস, হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন’, যোগ করেন তিনি। 

 

এদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এরইমধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া এদিন সন্ধ্যায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সামাজিক মাধ্যম এক্সে বিবৃতিটি প্রকাশ করেন। 

 

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে 


এতে বলা হয়েছে, 

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ঘোষিত রায় সম্পর্কে ভারত অবগত হয়েছে। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে, ভারত বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার মধ্যে রয়েছে শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতা।

 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সেই লক্ষ্যে আমরা সর্বদা সকল অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে জড়িত থাকব।’ 
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন