হাসিনার ফাঁসির রায়কে স্বাগত জানাল আলেম সমাজ

১ সপ্তাহে আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দণ্ডাদেশের দিনকে দেশের ইতিহাসে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে উল্লেখ করে এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছে সাধারণ আলেম সমাজ।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) সাধারণ আলেম সমাজের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা এই প্রতিক্রিয়া জানান।

 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত রায়ে এক মামলায় শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড এবং আরেক মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আদালতে আওয়ামী লীগের অপরাধনামা উপস্থাপনের সময় অতীত স্বৈরশাসনের প্রেক্ষাপটে শেখ মুজিবুর রহমানের নামও উচ্চারিত হয়েছে বলে আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই রায় জাতির বহু মানুষের কাছে স্বস্তি ও নৈতিক দৃঢ়তার বার্তা হিসেবে এসেছে বলে উল্লেখ করা হয়।

 

সাধারণ আলেম সমাজ জানায়, তারা এই রায়কে মানবতার শত্রুতা ও রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বহু বছরের গণআন্দোলনের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে স্বাগত জানাচ্ছেন। শাপলা গণহত্যা ও আলেম-নেতৃবৃন্দের প্রতি দমন-পীড়নসহ নানা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে এই রায়কে তারা ‘ইন্তেফাদার ফলাফলের অংশ’ হিসেবে অভিবাদন জানান।

 

তারা জানান, জাতীয় এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় রায় উপলক্ষে সাধারণ মানুষের আনন্দ প্রকাশের সময় পুলিশের হামলায় মাদরাসার শিক্ষার্থী, জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া যোদ্ধা এবং চোখ হারানো এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তারা এ ঘটনাকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন।

 

তাদের দাবি, সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে এখনও ‘ফ্যাসিবাদী উপাদান’ সক্রিয় থাকায় এমন ঘটনা ঘটছে। জুলাই-পরবর্তী সময়ে পুলিশ আওয়ামী নেতাদের ধরপাকড়ে শৈথিল্য এবং মুক্তিকামী মানুষের প্রতি কঠোর আচরণ দেখাচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানান তারা।

 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ‘১০০১ জন শিক্ষক বিচারিক প্রক্রিয়াকে শাহবাগী প্রকল্পে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছেন’ যা তারা নিন্দা ও প্রত্যাখ্যান করেন।

 

আরও পড়ুন: ফজলুর রহমানের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানালো সাধারণ আলেম সমাজ

 

আলেম সমাজের দাবি, শিক্ষকতার মতো মহৎ পেশায় থাকা অবস্থায় কেউ যদি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রতি গাদ্দারি করার চেষ্টা করেন’, তাহলে তা রাষ্ট্রের সুস্থ বিবেকের জন্য ক্ষতিকর। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে তারা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের ক্লাস বর্জনের আহ্বান জানান।

 

তাদের মতে, বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক বা আদর্শিক মঞ্চে পরিণত করার প্রয়াস জাতিকে বিভক্ত করে। বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব হলো জনমানসের ন্যায়বোধকে সম্মান জানানো, বিচারকে সংঘাতমুখী করা নয়।

 

সাধারণ আলেম সমাজ আরও জানায়, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও বিতর্কমুক্ত বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ঘোষিত রায় কার্যকর করা এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রায় ঘোষণা ন্যায়বিচারের প্রথম ধাপের বাস্তবায়নেই বিচার সম্পন্ন হবে। বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন উল্লেখ করে তারা আশা প্রকাশ করেন যে, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত আন্তর্জাতিক মান্যতা ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার সম্মান রক্ষায় সহযোগিতা করবে। বিচারাধীন ব্যক্তিদের প্রত্যর্পণ বিষয়ে তারা ভারতের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

 

শেষে তারা পুনর্ব্যক্ত করেন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বিলম্বিত না করে এবং কোনো রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াই যেন দ্রুততম সময়ে রায় কার্যকরের পদক্ষেপ নেয়া হয়। দেশের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে এটি জরুরি বলেও তারা দাবি করেন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন