শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় শহিদ মিনারে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার ৯ম সম্মেলনের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে হাসিনা কোনভাবেই সফল হবে না। বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়েও তারা সেটা সফল করতে পারবে না।
গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে জোনায়েদ সাকি বলেন, গণঅভ্যুত্থান এককভাবে কোনো দল করে নাই। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে সমস্ত দল আন্দোলন করেছিল। যারা দল করেন না এমন অসংখ্য মানুষ এই অভ্যুত্থানে যুক্ত হয়েছিলেন এবং জীবন দিয়েছিলেন।
নির্বাচিন প্রসঙ্গে জোনায়েদ সাকি বলেন, নির্বাচন সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংস্কারের বিষয় চূড়ান্ত ফয়সালা করতে হলে নির্বাচন লাগবে। নির্বাচন ভন্ডুল হয়ে গেলে।কেউ একক কর্তৃত্ব কায়েম করতে গেলে এই রাষ্ট্রে আবার অন্ধকার জেঁকে বসবে। তাই আমরা নির্বাচন চাই। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে।
নির্বাচন নিয়ে জবরদস্তি করতে চাইলে সংঘাতের সৃষ্টি হবে এমন হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
জামায়াতে ইসলামকে উদ্দেশ্য করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কোনো কোনো দল পি আর পদ্ধতি দাবি করছে। ঐক্যমত্য কমিশনে নিম্নকক্ষ অর্থাৎ জাতীয় সংসদে পি আর পদ্ধতির কোনো প্রস্তাবই ছিল না। আমরা দেখলাম জামায়াতে ইসলাম সাম্প্রতিক সময়ে পি আরের দাবিতে নিম্নকক্ষেও আন্দোলনে নেমে গেছেন
জোনায়েদ সাকি বলেন, জামায়াতে ইসলামী যে পদ্ধতিটি দাবি করছে সেটাতো হলো ৩০০ আসনেই পিআর। তার মানে এখানে কোনো প্রার্থীর দরকার নাই। তাহলে একেকজন নেতার নামে যেভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় সেই রকম নির্বাচন হবে একজন নেতা, একটি প্রতীক, একটি দল। তার উপরে সব মানুষ ভোট দাও, সে ভোটে যে যতো ভোট পেল সে অনুযায়ী যে যার দল মনোনয়ন দিয়ে দিবে। এটা জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক জায়গা হলো না।
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, পিআর যদি করতে হয় মিশ্র করতে হবে। তাহলে উচ্চকক্ষে দরকার নাই। নিম্নকক্ষেই মিশ্র পদ্ধতিতে হতে পারে। আর যদি উচ্চকক্ষ লাগে তখন নিম্নকক্ষে আর পি আরের দরকার নাই। কিন্তু এইটাতো আমরা ব্যাখ্যা দিচ্ছি, আমাদের ব্যাখ্যা মানুষ যদি ঠিক মনে করে তাহলে ঠিক হবে। যার ব্যাখ্যায় মানুষ ঠিক মনে করবেন সে অনুযায়ী ভোট হবে।
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, আলেমদের একটা বিজয় হয়েছে। আরও একটা বড় বিজয় দরকার। দেশকে সংহত করা দরকার। দেশকে গড়ে তোলা দরকার। রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা আনা দরকার। আওয়ামী লীগ সরকার যে ফ্যাসিস্ট তা আমরা বলেছিলাম। এই সরকার যে বিতাড়িত হবে আমরা তাও বলেছিলাম। এই লুটের বন্দোবস্ত আর চলবে না। পরিস্কার করে বলেছিলাম, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত লাগবে। এখনও তাই বলছি।
আরও পড়ুন: নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা করছেন কেউ কেউ: সাকি
জুলাই সনদের উপর গুরুত্ব দিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, জুলাইয়ের সনদ রক্তের উপর লেখা সনদ। এই সনদ আগামী জনপ্রতিনিধিরা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকবেন এমন আইন করতে হবে। কেবল অঙ্গীকারে কেউ বিশ্বাস করছে না। এই দেশের ইতিহাসে বহু অঙ্গিকার বহুজনে ভঙ্গ করেছে।
তিনি বলেন, আমরা যদি সত্যিকারের গণতন্ত্র চাই তাহলে বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন লাগবে। জুলাই এর যে সনদ তা রক্তের উপর লেখা। এই সনদ বৈধ, এই সনদ আগামী জনপ্রতিনিধিরা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য এমন আইন করতে হবে।
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করে জোনায়েদ সাকি বলেন, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি তারা কেউই দূর্নীতি থেকে বাইরে নয়। কেউ কেউ চাঁদাবাজি করছে আর কেউ কেউ বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের এমডি আর পরিচালক হয়ে ভাগ নিচ্ছেন। আমরা আপনাদের খোঁজ খবর রাখি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেক সমন্বয়কের বিরুদ্ধেও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
ছাত্র ফেডারেশনের নতুন জেলা সভাপতি সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সৌরভ সেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান তাসলিমা আখতার, গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, মহানগর নির্বাহী সমন্বয়কারী পপি রাণী সরকার, ছাত্র ফেডারেশনের সদ্য সাবেক জেলা সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৃজয় সাহা প্রমুখ।