হাশরের ময়দানে উম্মতের জন্য প্রিয় নবীজির সুপারিশ

১ সপ্তাহে আগে
আসরের ময়দানের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে সবাই অস্থির হয়ে যাবে। হিসাব নিকাশ শুরুর বিলম্বের কারণে অস্থিরতা আরো মারাত্মক আকার ধারণ করবে। অতঃপর কিছু মানুষ হিসাব নিকাশ শুরু করার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার জন্য হজরত আদম, হজরত নুহ, হজরত ইবরাহিম, হজরত মুসা আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালাম গনের কাছে যাবেন।

তারা প্রত্যেকেই নিজেদের অপারগতা প্রকাশ করবেন। সর্বশেষ তারা হজরত ঈসা আ. এর কাছে গেলে তিনি তাদেরকে আমাদের প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পাঠিয়ে দিবেন।

 

তারা সবার থেকে নিরাশ হয়ে, প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মাদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলবেন -

 

يَا مُحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ وَخَاتَمُ الْأَنْبِيَاءِ غُفِرَ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ الَّا تَرَى مَا نَحْنُ فِيْهِ হে মোহাম্মাদ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবী। আপনার আগে পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। আপনি আমাদের (হিসাব শুরু করার) জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন। আপনি দেখছেন না আমরা কত কঠিন অবস্থায় আছি?

 

অতঃপর নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরশের নীচে গিয়ে সিজদাবনত হবেন। ঐ সময় আল্লাহ তাআলা তাকে নতুন কিছু শব্দাবলী শিখিয়ে দেবেন। যা দ্বারা তিনি আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করবেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা দয়াপরশ হয়ে বলবেন,

 

يا محمدُ، ارفعْ رأسَك، وسَلْ تُعْطَه، واشفَعْ تُشفَّعْ হে মুহাম্মাদ! আপনার মাথা উঠান। আপনি প্রার্থনা করুন, আপনাকে তা দেওয়া হবে। আপনি সুপারিশ করুন। আপনার সুপারিশ কবুল করা হবে। (সহিহ বোখারি- ৪৭১২, সুনানে তিরমিজি- ২৪৩৪)

 

অতঃপর আল্লাহ তাআলা মেঘমালার ন্যায় বিশাল বহরে করে হাশরের ময়দানে অবতরণ করবেন। ফেরেশতারা আগমন করবেন। আল্লাহর আরশ আটজন ফেরেশতা বহন করে রাখবে। তারপর হিসাব-কিতাব শুরু হয়ে যাবে। (তুহফাতুল আলমায়ি- ৬/২০৮, মাআরিফুল হাদিস- ১/১১৬)

 

আরও পড়ুন: নবীজির প্রিয় ও পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে সিরাতের বই ‘নবীজির প্রিয় ১০০’

 

বিনা হিসাবে জান্নাত দানের সুপারিশ 

 

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাশরের ময়দানে আরশের নীচে কয়েকবার সিজদায় পড়ে কাঁদবেন। প্রথমবার হিসাব-কিতাব শুরুর জন্য। তারপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অবস্থার জন্য কাঁদবেন। এর মধ্যে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশের জন্যও সুপারিশ করবেন। যেমন, এক হাদিসের শেষে বর্ণিত হয়েছে-

 

فَأَقُولُ يَا رَبِّ أُمَّتِي يَا رَبِّ أُمَّتِي يَا رَبِّ أُمَّتِي আমি বলবো, হে আমার রব! আমার উম্মতের উপর দয়া করুন। 


 

হে আমার রব! আমার উম্মতের উপর দয়া করুন।   হে আমার রব! আমার উম্মতের উপর দয়া করুন। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন-

 

يَا مُحَمَّدُ أَدْخِلْ مِنْ أُمَّتِكَ مَنْ لَا حِسَابَ عَلَيْهِ مِنَ الْبَابِ الْأَيْمَنِ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ হে মোহাম্মাদ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনার উম্মতের মধ্যে যাদের কোনো হিসাব-নিকাশ নেই, তাদেরকে আপনি জান্নাতের ডান দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করান। (তিরমিজি, হাদিস- ২৪৩৪)


 

জাহান্নাম থেকে বের করার জন্য সুপারিশ

 

আসলে হাশরের ময়দানে নবীজির সুপারিশের কথা অনেক দীর্ঘ। যার কিছু মাত্র আমাদেরকে জানানো হয়েছে। সর্বশেষ যে সকল মুসলমান ঈমানের দুর্বলতার কারণে বা কোনো কবিরা গুনাহের কারণে জাহান্নামে চলে যাবে তাদেরকেও নবীজির সুপারিশের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে পর্যায়ক্রমে বের করা হবে। এমনকি এক সময় সকল কালেমা পাঠকারীকেই বের করা হবে।


আবার নবীজি আরশের নীচে সিজদায় পড়ে কাঁদবেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলবেন

 

انْطَلِقْ فَأَخْرِجْ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ أَدْنَى أَدْنَى أَدْنَى مِثْقَالِ حَبَّةٍ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ فَأَخْرِجْهُ مِنَ النَّارِ যাও, যাদের অন্তরে সরিষার দানার চেয়েও কম ঈমান আছে তাদেরকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনো। অতঃপর নবীজি তাদেরকেও বের করে আনবেন। (সহিহ বোখারি, হাদিস- ৭৫১০) তথ্যসূত্র: উম্মতের প্রতি নবীজির ভালোবাসা পৃ: ৪১-৪৩

 

লেখক: মুফতি জুবায়ের বিন আবদুল কুদ্দুছ সিনিয়র শিক্ষক, লালবাগ মাদ্রাসা ঢাকা, খতিব, আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ, পরিচালক, দাওয়াতুস সুন্নাহ বাংলাদেশ

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন