সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা থেকে আসা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি টিম হারুনের বিলাসবহুল এই রিসোর্টে অভিযান চালায়। তারা রিসোর্টের বিভিন্ন কক্ষসহ আশপাশে তল্লাশি চালায়।
এনবিআরের পরিচালক চাঁদ সুলতানা চৌধুরানীর নেতৃত্বে অভিযানে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।
দুপুর সোয়া দুইটা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী অভিযানে রিসোর্ট থেকে ৪টি কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক ও বেশকিছু নথিপত্র জব্দ করা হয়।
সরকারি রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তদন্তের অংশ হিসেবে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং তদন্ত শেষে রিপোর্ট দাখিলের পর বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানান অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া রাজস্ব বোর্ডের পরিচালক চাঁদ সুলতানা চৌধুরানী।
প্রসঙ্গত, এর আগে কর ফাঁকি, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অভিযোগে মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ ও তার পরিবারের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব জব্দে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল-সিআইসি।
গত ২১ অক্টোবর এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) থেকে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তাতে সাবেক ডিবি প্রধান ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: ডিবি হারুনের বিলাসবহুল রিসোর্টে এনবিআরের অভিযান
হারুন ছাড়াও তার বাবা-মা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে বা বোনের যৌথ নামে অথবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবও জব্দ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
হাওর অধ্যুষিত কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার দুর্গম ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে হারুনের বাড়ি। হোসেনপুরে নিজের বাড়ির পাশে শত কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল এই রিসোর্ট।
প্রায় ৩০ একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা রিসোর্টে তিন তারকা মানের ২০টি দোতলা কটেজ। এর ৪০টি কক্ষই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। বিশাল জলাধারের চারপাশ ঘিরে পাকা সড়ক। একপাশে কটেজ, বিশাল সুইমিং পুল, ওয়াচ টাওয়ার, গেমজুন ও পার্টি সেন্টার। অপর পাশে রেস্টুরেন্ট। এখানে একরাতের ভাড়া ন্যূনতম ৭ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৮ হাজার টাকা। রিসোর্টের ভেতরে বিশাল পুকুরের মাঝে তৈরি করা হয়েছে হেলিপ্যাড। হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে যখন তখন নিজের রিপোর্টে চলে আসতেন হারুন অর রশীদ। বাইরের লোকজনের জন্য ছিল না ভেতরে প্রবেশের অনুমতি।
আরও পড়ুন: গণধোলাই এবং দেয়াল টপকে পালানোর বিষয়ে মুখ খুললেন সেই ডিবি হারুন
মন্ত্রী-এমপি, সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র তারকারা যখন তখন ছুটে আসতেন হারুনের রিসোর্টে। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ে রিসোর্টটি পরিদর্শন করেছেন মো. আব্দুল হামিদও। মূলত তার নামেই এই রিপোর্টের নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট।’
২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রিসোর্টটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক প্রধান অতিথি হিসেবে এটি উদ্বোধন করেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পালিয়ে যান গোয়েন্দা পুলিশের আলোচিত কর্মকর্তা হারুন। এলাকা ছেড়ে চলে যান রিসোর্টের এমপি তার ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ার কবির। এরপর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় তিন তারকা মানের এই রিসোর্ট।