এমন করুণ অভিজ্ঞতার কথা সময় সংবাদকে জানান ঢাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করা সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা হানিফ আলী। তিনি বলেন, ‘শেষমেষ আরও কয়েকজনকে নিয়ে ৩০ টাকার ভাড়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ২ ঘণ্টা। আমার মতোই প্রায় সবাইকে প্রতিদিন এভাবে ভোগান্তি পোহাতে হয়। হাজার হাজার মানুষ জিম্মি খেয়াঘাট ইজারাদারদের কাছে।’
জানা যায়, ফারাক্কার ভাটিতে ভারত থেকে আসা অতিরিক্ত পানির প্রভাবে দেড় মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় ১১ হাজার পরিবার। কয়েকদিন পরপর পদ্মার পানি বাড়া-কমার কারণে নদী তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিচ্ছে ভয়াবহ ভাঙন। এর পাশাপাশি চরাঞ্চলের মানুষের নতুন ভোগান্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে খেয়াঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া ও টোল আদায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, খেয়াঘাট ইজারাদাররা নিয়ম-নীতি মানছে না। জোরপূর্বক আদায় করা হচ্ছে টোল। এক কেজি বেগুন, একটি ডাব কিংবা একটি গাছের চারা নিয়েও নেয়া হচ্ছে টাকা। টোলের টাকা দিতে না পারলে আটকে রাখা হয় মালামাল ও মরদেহ। ঘরবাড়ি ভাঙনের শিকার মানুষ মালপত্র নিতে গেলে গুনতে হয় ৪-৬ হাজার টাকা।
নারায়নপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা তারেক রহমান বলেন, ‘একজন মানুষ পারাপারে ৩০ টাকার জায়গায় নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। একটি আটার বস্তায় নেয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। একটি ডাব বা গাছের চারা নিয়েও টাকা দিতে হয়। দর কষাকষি করলে নৌকা থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের জানালেও কোনো সুরাহা হয়নি। কারণ তারাও সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত।’
আরও পড়ুন: আঙুলের চাপেই উঠে আসছে কোটি টাকার সড়কের কার্পেটিং!
ষাটোর্ধ্ব তরিকুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে জামাই মারা যায়। জানাজায় অংশ নিতে ঘাটে গেলে বলা হয় ৫-৬ হাজার টাকা না দিলে নৌকা ছাড়বে না। মরদেহ পারাপারেও টাকা দিতে হয়।’
কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও নিরাপদে নদী পার হওয়া যায় না। অতিরিক্ত যাত্রী ও মাল বোঝাইয়ের কারণে প্রায়ই ঘটে নৌকাডুবি। এতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে প্রতিবছর।’
স্থানীয়রা বলেন, ইজারাদারদের যোগসাজশে নদীতে নৌকার সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নেওয়ার পর পুনরায় তা হাতবদল হয়। এতে বেড়ে যায় যাত্রীদের ভাড়া। অসাধু কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারাও এতে জড়িত থাকায় প্রতিকার মিলছে না।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইজারাদারদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
প্রসঙ্গত, গত বছর অতিরিক্ত টোল আদায়ের প্রতিবাদে শিবগঞ্জ উপজেলায় ইজারাদারদের ঘর পুড়িয়ে দেয় স্থানীয়রা। চলতি বছর ভাগরথি জোহরপুর ঘাট ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও বাখের আলী ঘাট ৩৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় ইজারা দেয়া হয়।
]]>