হাওড়ের বোরো চাষিদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

২ সপ্তাহ আগে
অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে মৌলভীবাজারের হাইলহাওড়, কাউয়াদিঘি ও হাকালুকিসহ বিভিন্ন হাওড়ের বিল শুকিয়ে গেছে। ফলে হাওড়পারের বোরো ফসলি জমিতে দেখা দিয়েছে চরম পানি সংকট। থোড় আসা অবস্থায় জমির ধান বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের দাবি, ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। এতে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, বৃষ্টিপাত হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

গত বছরের বন্যায় আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষকেরা এবার বোরো চাষে ঝুঁকেছেন। 


মৌলভীবাজারের হাওড় অঞ্চলে এবার কৃষি বিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত এক হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ৪৭ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়। এছাড়া মনুনদী প্রকল্পভুক্ত কাওয়াদিঘি হাওড়ে অন্যান্য বছরের তুলনায় আগেভাগেই সেচের পানি সরবরাহ করা হয়েছিল। মাঠে উঠান বৈঠক করে কৃষকদের পরামর্শও দেওয়া হয়।

 

প্রথমদিকে ভালো সম্ভাবনা থাকলেও মার্চের শেষ দিক থেকে শুরু হওয়া অনাবৃষ্টি ও খরায় কৃষকেরা বিপাকে পড়েন। হাওড়জুড়ে পানি না থাকায় অধিকাংশ বোরো জমি ফেটে গেছে। অনেক কৃষক দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দূর থেকে পাইপ দিয়ে জমিতে সেচ দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু তাতেও পর্যাপ্ত পানি মিলছে না।

 

শ্রীমঙ্গলের কৃষক সনজিত সূত্রধর জানান, গত বছর আমন ওঠাতে না পারায় এবার বোরোতেই আশার আলো দেখেছিলেন। কিন্তু পানি না থাকায় সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষক প্রদীপ জানান, তিনি ৩৫ কিয়ার জমিতে বোরো লাগিয়ে বিপুল টাকা বিনিয়োগ করেছেন, কিন্তু তোড় আসার সময় পানি না থাকায় ধান শুকিয়ে যাচ্ছে।

 

 

কৃষক নিয়ামত মিয়া জানান, তিনি প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূর থেকে সেচ দিয়েছেন, কিন্তু তাতেও জমি বাঁচছে না। তিনি অভিযোগ করেন, প্রভাবশালীরা উজানে কোদালিছড়ার পানি আটকে রাখায় সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

 

রাজনগর উপজেলার কাসেমপুর গ্রামের কৃষক জলিল মিয়া ও আনসার আহমদ জানান, চারা রোপণের সময় পোকামাকড়ের আক্রমণ সামাল দিলেও এখন পানি সংকটে ধানে ঠিকমতো তোড় আসেনি। তারা বলছেন, এবার অধিকাংশ জমিতে বোরো ধান চিঠা হবে।

 

আরও পড়ুন: মৌলভীবাজার /চা বাগানগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়

 

মনুনদী প্রকল্পভুক্ত এলাকার কৃষকদের কেউ কেউ পর্যাপ্ত পানি পেলেও, অনেক জায়গায় এখনও পানি সংকট রয়েছে। সদর ও রাজনগর উপজেলার কিছু অংশে সেচ পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো।

 

জেলা হাওড় রক্ষা আন্দোলনের সচিব খসরু মিয়া চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইজারাদারদের বিল ও নদীর পানি শুকিয়ে মাছ ধরার ফলে হাওড়ে ভয়াবহ পানি সংকট তৈরি হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে হাওড়ে বোরো চাষ ব্যাহত হবে।

 

 

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাগিব মাহফুজ বলেন, অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে ক্ষতি হচ্ছে ঠিকই, তবে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হবে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন জানান, হাওড় অঞ্চলে সেচ সমস্যা সমাধানে একনেক সভায় সারফেস ওয়াটার ব্যবহার সংক্রান্ত একটি বড় প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে মৌলভীবাজারের হাওড় এলাকায় সেচ সমস্যা অনেকাংশে সমাধান হবে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মৌলভীবাজার জেলায় ৬২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ২৩১ মেট্রিক টন চাল, যা গত বছরের তুলনায় ৫ হাজার ৫৮৯ মেট্রিক টন বেশি। তবে চলমান খরা ও পানি সংকটে সেই লক্ষ্য অর্জন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন