এ বছর ব্যাপকভাবে বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যে শুরুতেই মৌলভীবাজারের মনু নদী প্রকল্পভুক্ত হাওড় কাউয়াদিঘি পাড়ের চাষিরা হালিচারার জন্যে আগেভাগে বোরো বীজতলার জমি তৈরির প্রস্তুতি নেন। সে সঙ্গে এ হাওড়ে ২৫৫ হেক্টর জমির বীজতলায় হিরা-১, হিরা-২, হিরা-৩, ৬৯, ৯২ এবং হাইব্রিডসহ বিভিন্ন জাতের বোরো বীজ লাগান। কয়েক দিনের ব্যবধানে এসব বীজ থেকে সবুজ চারা জন্মায়। তবে সপ্তাহ-দশ দিনের মাথায় এসে চারাগাছে ব্যাপকভাবে এক ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এতে হাওড়পাড়ের অধিকাংশ বীজতলার হালিচারা বিনষ্ট হয়ে গেছে।
চাষিরা জানান, হাওড় এলাকায় প্রথম দিকে বিচ্ছিন্নভাবে পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এতে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে পোকা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা দ্রুততার সঙ্গে এ পোকা হাওড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বিছা আকৃতির নরম তুলতুলে এসব কালো রঙের পোকা সদ্য চারাগাছের গোড়ায় ধরে তা চারাগাছটিকে খেয়ে ফেলছে। এতে নতুন জন্ম নেয়া হালিচারা গাছ শুরুতেই মরে যাচ্ছে।
সরেজমিনে কাউয়াদিঘি হাওড়পাড়ের কাসেমপুর গ্রামসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বোরো বীজতলা ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা বীজতলা পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত। চাষিদের কেউ পাম্পের মাধ্যমে বীজতলায় পানি আটকিয়ে পোকা দমনের চেষ্টা করছেন; কেউ আবার কীটনাশক স্প্রে করছেন।
চাষি তৈয়ব আলী, মুজিবুর রহমান ও জলিলসহ বেশ কজনের সঙ্গে সময় সংবাদের কথা হয়। তৈয়ব আলী জানান, ১৫ থেকে ২০ দিন আগে তিনি তার বীজতলায় বোরো বীজ লাগিয়েছিলেন। চারাগাছ দেড় থেকে দুই ইঞ্চি বড় হতেই কালো রঙের পোকা সব খেয়ে ফেলছে। ৫০ থেকে ৬০ কিয়ার জমিতে তার বোরো করার কথা ছিল। পুনরায় আবার তিনি বীজ লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মুজিবুর রহমান জানালেন, তিনি তিন কিয়ার জমিতে বীজতলা করেছিলেন; তারও সব পোকা খেয়ে ফেলছে। এভাবে হাওড়জুড়ে চাষিদের মধ্যে একরকম হাহাকার বিরাজ করছে।
জলিলসহ অন্য চাষিরা আক্ষেপ করে বললেন, পুনরায় চারা তৈরি করে বোরো চাষাবাদ তাদের মতো গরিব চাষির জন্য খুবই কষ্টের। এ ব্যাপারে তারা সরকারের সহযোগিতা চাইছেন।
আরও পড়ুন: ধানে পাতামোড়ানো রোগ আর পোকার আক্রমণ, বিপাকে কৃষক
অপরদিকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার হাওড়পাড়ের চাষি বাবর জায়গীরদার ও মিলাদ মিয়াসহ অনেকে জানান, ৭ থেকে ১০ দিন আগে তাদের এলাকায় বোরো বীজতলায় গোড়াপচা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কীটনাশক ছিটানোর পর কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
তবে রাজনগর উপজেলা এলাকার চাষিরা জানান, বোরোর হালিচারা রক্ষায় তারা নানা কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করছেন। তারপরও কোনো প্রতিকার মিলছে না। তাছাড়া বীজতলায় পানি ডুবিয়ে রেখে হালি বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন অনেকে। চাষিদের দাবি, এরই মধ্যে হাওড় কাউয়াদিঘি পাড়ের অধিকাংশ জমির হালিচারা বিনষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা রাজনগর। নতুন করে আবার বীজতলায় চারা বীজ লাগাবেন এ সামর্থ্য অনেকের নেই।
এতে অনেক চাষি দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। কেউ বা আবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পৌষের শুরুতে হালিচারা লাগাতে জমি প্রস্তুতে কাজ করছেন। হাওড়ে পোকার আক্রমণের কথা স্বীকার করে এর প্রতিকারে প্রতি শতাংশে এক লিটার পানিতে দুই গ্রাম করে পাইমেট্রাজন প্রয়োগের পরামর্শ দিলেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা নাগিব মাহফুজ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও মনু নদী প্রকল্পভুক্ত কাউয়াদিঘি হাওড়ে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হবে।