৫ আগস্ট সন্ধ্যায় বংশাল এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন ৩৫ বছরের জাহিদুর রহমান সোহাগ। ছেলের জন্য মা সামিনা খাতুনের আর্তনাদ এখনও চলছে। ছেলেকে নিয়ে নামাজ আদায়ের ইচ্ছা ছিল মায়ের। কিন্তু কে জানত ঘাতকের গুলি কেড়ে নেবে আদরের সন্তানকে।
সামিনা খাতুন বলেন, ‘ছেলেকে আমি বললাম বাবা তুই যাইস না। আমরা মা-ছেলে একসঙ্গে নামাজ পড়ি। কিন্তু সে বলল না, আমি জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়মু, পইড়া চইলা আসমু। এরপর এক ঘণ্টা পর শুনি মৃত্যুর খবর। দেশের জন্য ছেলেটা শহীদ হইল।’
পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার ছোট্ট একটি বাসায় থাকতেন কাঠ ব্যবসায়ী সারফুদ্দিন। স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে ছিল তার সংসার। ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনে পুরো দেশ যখন উচ্ছ্বাসে উত্তাল, ঠিক তখনই পুলিশের গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সারফুদ্দিন।
তার মেয়ে সানজিবা উদ্দিন শিখা বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমার সঙ্গে কথা হয়। বললাম বাবা তুমি কোথায়, বলল আমি সোনালী ব্যাংকের সামনে। কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে বলল তোমার বাবা গুলি খেয়ে বড় মসজিদের সামনে পড়ে আছে তোমরা কেউ একজন যাও।’
আরও পড়ুন: অভ্যুত্থানে আহতদের দিন কাটছে যন্ত্রণায়, যাত্রাবাড়ীতে ১৩০ জন বয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষত
চাঁনখারপুল এলাকায় খুনের নেশায় মেতে উঠেছিল পুলিশ, যে চিত্র দাগ কেটেছিল হাজারো মানুষের হৃদয়ে। কেমন ছিল রণাঙ্গনের সেই দিনগুলো?
সেখানকার এক বাসিন্দা বলেন, বিভিন্ন অলি গলি থেকে ছাত্র-জনতার ওপর হাজার হাজার রাউন্ড গুলি করেছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দেয়।
৫২, ৭১, ৯০-র মতো ২৪-র আন্দোলন-সংগ্রামে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল পুরানো ঢাকার মানুষের। সেই ঐক্য সামনেও ধরে রাখতে চান এলাকার বাসিন্দারা।
মা আমি মিছিলে যাচ্ছি, নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বুজান, তোমার কথা অমান্য করে বের হলাম- ৫ আগস্ট চিঠি লিখে বাসা থেকে বের হয়ে চাঁনখারপুল এলাকায় শহীদ হন দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আনাস। রিকশা চালক সোহাগ মিয়া, কলেজ শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম শোভনদের রক্তে যে জনপথ রঞ্জিত হয়েছিল, সে জনপথের বাসিন্দারা থাকতে চায় শহীদদের স্মৃতি আঁকড়ে।
জুলাই বিপ্লবের ধারাবাহিকথায় গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী, এমপি বিদেশে পালিয়ে যান। দেশে থাকা মন্ত্রী, এমপিরাও রয়েছেন আত্মগোপনে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন অনেকে।
এদিকে গত ২১ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল থেকে প্রথম ধাপে ৮৫৮ জন শহীদ এবং ১১ হাজার ৫৫১ জন আহতের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
]]>