সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার বিশাল চর এলাকাগুলো এখন শুকনো বালুতে ঢাকা পড়েছে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদীতে পানি না থাকায় মরুভূমির আকার ধারণ করেছে চরগুলো। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াইয়ে এমনিতেই চরবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই। তার সঙ্গে মরার উপর খড়ার ঘা হয়ে দাড়িয়েছে বিশাল এ জনগোষ্ঠীর মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে নৌকাযোগে উপজেলা ও জেলা সদরে চিকিৎসা নিতে পারলেও নাব্য সংকটের কারণে বছরের অধিকাংশ সময় স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে জেলার ৪ উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষকে। চরে যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় স্বাস্থ্য কর্মীরা থাকছেন শহরে। চরে দেখা মেলে না তাদের। বাধ্য হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতেও বালুচরের দশ থেকে পনেরো কিলোমিটার পায়ে হেঁটে আসতে হচ্ছে জেলা কিংবা উপজেলা সদরে। আর গুরুতর অসুস্থ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় দুর্গম পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেই মারা যাচ্ছেন বিনা চিকিৎসায়। প্রসূতিসহ নারীরা প্রতিনিয়ত হচ্ছেন এ পরিস্থিতির বড় শিকার।
গাইবান্ধা সদরের মোল্লার চর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. বেলাল হোসেন জানান, চরে কোনো স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। চরের চিকিৎসা সেবার একমাত্র মাধ্যম কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতেও মিলছে না স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চর কেন্দ্রিক চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র করা জরুরি।
কামারজানি চরের বাসিন্দা শামিউল ইসলাম জানান, জেলার বিশাল একটা অংশ চর হলেও এখানে চর কেন্দ্রিক কোনো স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। একটি চর থেকে আরেকটি চর নদী দাড়া বিচ্ছিন্ন। অসুস্থ হলে হাসপাতাল বা বালু মাটিতে চলার কোনো বিশেষ যানবাহন না থাকায় বাঁশ বা কাঠের সাই বানিয়ে ঘাড়ে করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে নিতে হয়।
আরও পড়ুন: সুবিধাবঞ্চিত মানুষের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হবে সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশন: প্রধান উপদেষ্টা
চরে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী সংগঠন গাইবান্ধা ছিন্নমূল মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মো. মুর্শীদুর রহমান খান বলেন, ‘চরের স্বাস্থ্য সেবা অত্যন্ত নাজুক। বৃহৎ এ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা ব্যবস্থায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রত্যন্ত এসব চরের শিক্ষিত বেকারদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা দেবার উপযোগী হিসাবে গড়ে তোলা গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার ঘাটতি কিছুটা মেটানো সম্ভব হবে।’
গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডা. কানিজ সাবিহা বলেন, ‘নদীর নাব্য ও জনবল সংকটের কারণে চরের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। চরাঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়াতে চেষ্টা চলছে। গুরুতর অসুস্থদের দুর্গম চরাঞ্চল থেকে আনা নেয়ার জন্য নৌকা ও ঘোড়ার গাড়ির ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’
জেলার ৪ উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদীর ছোট বড় ১৬৫টি চর রয়েছে। নানা সংকট ও দুর্যোগ মোকাবেলা করে বসবাস করা চরাঞ্চলের এ বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার বিষয়টি বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার দাবি স্থানীয়দের।