স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশেই অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার-প্রাইভেটহাসপাতাল, হুমকির মুখে স্বাস্থ্যসেবা

২ সপ্তাহ আগে
মাদারীপুরে অনুমোদন ছাড়া একের পর এক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে উঠছে। এসব প্রতিষ্ঠান নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে, যার ফলে রোগীরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। অনুমোদন না থাকা নিয়ে মালিকপক্ষ খোঁড়া যুক্তি দিলেও স্বাস্থ্য বিভাগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে গড়ে উঠেছে সূর্য ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে পাশাপাশি দুটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেও নেই কোনো অনুমোদন বা বৈধ লাইসেন্স।

 

লাইসেন্স না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে মালিক সূর্য মাদবর দেন খোঁড়া যুক্তি। তিনি বলেন, ‘সরকারের অনুমোদনের জন্য সব কাগজপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। আশা করছি, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে অনুমোদন পাওয়া যাবে। তবে আমি দুটি প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি না। অসুস্থ রোগীদের জন্য নিচে আলাদা একটি কক্ষ করা হয়েছে, যারা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে পারেন না।’

 

আরও পড়ুন: রাতের আঁধারে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা সংগ্রহ, বড় ক্ষতির মুখোমুখি প্রাণ-প্রকৃতি

 

তবে শুধু এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারই নয়, শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশপাশে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবাকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে এক ডজনেরও বেশি অননুমোদিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতাল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার টিনশেড ঘরে চালানো যায় না; এক্স-রে মেশিন বসাতে হয় পাকা ভবনে। কিন্তু এখানকার চিত্র একেবারে উল্টো।

 

মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার কথা থাকলেও এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের কারণে তা পরিণত হয়েছে বাণিজ্যে। মানসম্মত সেবা না পেয়ে রোগীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ, প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকেই। জেলার পাঁচটি উপজেলায় বর্তমানে ১০৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ৭০টি প্রাইভেট হাসপাতাল থাকলেও, এর মধ্যে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান মাত্র ১৪টি, বাকিগুলো চলছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে।

 

২০২১-২২ অর্থবছরে সবশেষ নবায়ন হয়েছে শিবচর ল্যাবএইড অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের। তারপরও চার বছর ধরে কীভাবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে-এমন প্রশ্নে মুখোমুখি করা হলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আতাউর রহমান মাদবর বলেন, ‘লাইসেন্স করতে অনেক কাগজ লাগে। এই কাগজ করতে অনেকদিন সময়ও লাগে। পরে আবেদন করলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পরিদর্শন করে অনুমোদন দেয়। কিছু কিছু কাগজ করতে জটিলতা হওয়ায় মালিকপক্ষ সামনে আগাতে চাইলেও পিছিয়ে যায়। তবে আমার প্রতিষ্ঠানের সব কাগজপত্র প্রস্তুত আছে।’

 

 

অন্যদিকে সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকপক্ষের প্রতিনিধি জাকির হোসেন সরকারের জটিল নিয়ম-কানুনকেই দুষলেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের অনেক নিয়ম-কানুন। এতো নিয়ম-কানুন থাকার কারণেই সমস্যা হয়। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট, ট্যাক্স-সবকিছু পরিশোধ করা আছে। আবেদনও করেছি। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সরেজমিনে কেউ আসে না, আর অনুমোদনের কাগজও দেয় না। আমরা চাই সরকারি নিয়ম মেনে এই প্রতিষ্ঠান চালাতে।’

 

তবে অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানে ভুয়া ও হাতুড়ে ডাক্তার, অদক্ষ নার্স ও স্টাফ নিয়োগ দিয়ে মধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও অসহায় রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কখনও কখনও ঘটছে অকাল মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনা। সরকারি হাসপাতালের আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

 

রোগী ও স্বজনরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালের সেবার মান উন্নত করা গেলে এমন ভুঁইফোঁড় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দৌরাত্ম্য অনেকটাই কমে আসবে। তারা বলছেন, এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা চকচকে ভবনের আড়ালে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, অথচ নজরদারির অভাবে কেউ তদারকি করছে না।

 

আরও পড়ুন: বিএফএসএর সতর্কবার্তা / মুগ ডালে অননুমোদিত রঙ ব্যবহার, গ্রহণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

 

আবুল বাশার নামে এক রোগী বলেন, ‘লাইসেন্স থাকায় আমরা রোগীরা প্রতারিত হচ্ছি। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে সরকারের কঠোর মনিটরিং করা দরকার। শুধু চকচকে ভবন দিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।’

 

অন্য এক রোগী সুমি আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘দুদিন পর পর বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগী মারা যায়। দায়িত্ব অবহেলা, নয়তো ভুল চিকিৎসায় এমন ঘটনা ঘটে। স্বাস্থ্য বিভাগ এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় কিছুতেই থামছে না এই অপচিকিৎসা। আমরা জেলাবাসী এর প্রতিকার চাই।’

 

এমন পরিস্থিতিতে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন। মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. শরিফুল আবেদীন কমল বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবার নামে কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় রূপ নিয়েছে। সাধারণ রোগীদের সঙ্গে প্রতারণাও করছেন তারা। এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। শিগগিরই এই অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন