সার্ভেয়ার পেশার কামাল হোসেনের সংসার টিকেছিল প্রায় এক যুগ। স্ত্রী সাথী আক্তারের সংসারে দুই সন্তান। তবে গত ১০ আগস্ট আচমকা সব পাল্টে যায়। সন্তানদের ফেলে রেখে শহরের এক বিবাহিত যুবকের হাত ধরে চলে যান সাথী। পরে জানা যায়, তিনি স্বামী কামালকে তালাক দিয়েছেন।
সাধারণত এমন পরিস্থিতিতে কেউ ভেঙে পড়েন, কেউবা দীর্ঘদিন বিষণ্নতায় ভোগেন। কিন্তু কামাল উল্টো বেছে নিলেন ভিন্ন পথ। জেদের জেরেই সিদ্ধান্ত নিলেন, জীবন থেমে থাকবে না। সন্তানকে সঙ্গী করেই নতুন জীবনের পথচলা শুরু করবেন।
শুক্রবার দুপুরে ছোট কন্যাকে কোলে নিয়ে হেলিকপ্টারে রওনা হন কামাল। গন্তব্য নতুন শ্বশুরবাড়ি। সেখানেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নববধূকে ঘরে তোলেন তিনি। গ্রামের মানুষজনের জন্য এটি ছিল যেন সিনেমার দৃশ্য। হেলিকপ্টারের শব্দে চারপাশের মানুষ ছুটে আসেন বরের আগমন দেখতে।
আরও পড়ুন: বিয়েতে যাওয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, গৃহবধূর আত্মহত্যা
কামাল হোসেন বলেন, ‘পুরুষ নির্যাতনের কথা সমাজে খুব কমই উচ্চারিত হয়। আমার সংসারে কোনো অভাব ছিল না। কাজের কারণে দিনের অনেকটা সময় বাইরে থাকতে হলেও সব দায়িত্বই পালন করেছি। কিন্তু আগস্টে স্ত্রী অন্যের সঙ্গে পালিয়ে যায়। পরে জেনেছি, মুন্না নামের এক যুবকের সঙ্গে গিয়েছে। তখনই ঠিক করি, ভেঙে পড়ব না। নতুন করে জীবন শুরু করব।’
তিনি আরও জানান, সব জেনে শুনে নতুন স্ত্রীর পরিবার বিয়েতে রাজি হয়েছেন। সন্তানদের দায়িত্ব নিতেও ইচ্ছুক সে। তাই তাকে চমক দেয়ার জন্যই হেলিকপ্টার ভাড়া করি। আজ নতুন বউ নিয়ে ঘরে ফিরেছি। সবার কাছে দোয়া চাই।
হেলিকপ্টারে বরের আগমন দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন গ্রামের শত শত মানুষ। তাদের কাছে এ ঘটনা ছিল অপ্রত্যাশিত আনন্দ আর কৌতূহলের খোরাক।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বিয়ের আয়োজন নিয়ে নানা ধরনের ব্যতিক্রমী আয়োজন শোনা যায়। তবে স্ত্রী হারানোর শোক থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এভাবে আকাশপথে বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করার ঘটনা নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী। কামালের এই সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন সমাজে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, অন্যদিকে অনেকের চোখে তিনি হয়ে উঠেছেন জীবনের কঠিন আঘাত সামলানোর এক ভিন্ন প্রতীক।
এই বরের বাড়ি কাঁঠাদিয়া-শিমুলিয়া ইউনিয়নের ধোপাবাড়ি এলাকায়। তিনি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরত্বের আলদির গাজীবাড়ির কনে বাড়িতে পৌঁছান আকাশে উড়ে।
আরও পড়ুন: একাধিক বিয়ে করে আলোচিত সেই বন কর্মকর্তা পালানোর সময় আটক
১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় ভাড়া করা কপ্টারটি চাঁদপুর থেকে বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের সময় ধোপাবাড়ি মাঠে ল্যান্ড করে। বিকেল সাড়ে চারটায় বর নিয়ে উড়াল দিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যেই কনের বাড়ি পৌঁছান।
]]>