‘স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রচণ্ড অত্যাচার করত’: সুইসাইড নোট লিখে দিল্লির ক্যাফে মালিকের আত্মহত্যা

১ সপ্তাহে আগে
ভারতের রাজধানী শহর নয়াদিল্লিতে পুনীত খুরানা নামে এক ক্যাফে মালিক আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার আগে তিনি সুইসাইট নোট হিসেবে একটি ভিডিও রেখে গেছেন। সেখানে তিনি বর্ণনা করেছেন, পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমে শুরু হওয়া চলমান বিবাহবিচ্ছেদ প্রক্রিয়া কীভাবে স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে একটি তিক্ত বিবাদে রূপ নিয়েছিল।

মৃত্যুর আগে রেকর্ড করা ওই ভিডিওতে, ৪০ বছর বয়সি পুনীত খুরানা অভিযোগ করেছেন যে, তার স্ত্রী মনিকা পাহওয়া ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছ থেকে মানসিক নির্যাতন এবং অযৌক্তিক দাবিদাওয়া তাকে আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করেছে।

 

ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর মডেল টাউন এলাকায়। আত্মহত্যার আগে পুনীত খুরানা তার কষ্ট ও যন্ত্রণার কথা একাধিক ভিডিওতে রেকর্ড করে রেখে গেছেন। তার মৃত্যুর পর ৫৯ মিনিটের ভিডিও রেকর্ড উদ্ধার করা হয়েছে। 

 

তাতে তিনি দাবি করেছেন, স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার কাছে ১০ লক্ষ রুপি নগদ অর্থ দাবির পাশাপাশি আরও কিছু দাবিদাওয়ার বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিল, যা তার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।

 

পুনীতি সেই ভিডিও রেকর্ডে বলেছেন, 

আমি আত্মহত্যা করতে চলেছি কারণ আমি আমার শ্বশুরবাড়ি ও আমার স্ত্রীর দ্বারা অত্যন্ত অত্যাচারিত। আমরা ইতিমধ্যে কিছু শর্তে পারস্পরিক বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছি। স্পষ্টতই, পারস্পরিক বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে আমরা আদালতে কিছু শর্তে স্বাক্ষর করেছি। ১৮০ দিনের মধ্যে আমাদের সেই শর্তগুলো পূরণ করতে হবে।

 

আরও পড়ুন: ইয়েমেনে ভারতীয় নার্সের ফাঁসির দণ্ড কী অপরাধে

 

‘কিন্তু আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও আমার স্ত্রী আমাকে একটি নতুন শর্ত দিয়ে চাপ দিচ্ছে যা আমার সাধ্যের বাইরে। তারা আরও ১০ লক্ষ রুপি চাইছে যা দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। আমি আমার বাবা-মার কাছে চাইতে পারি না। কারণ তারা ইতিমধ্যে যথেষ্ট অর্থ প্রদান করেছে,’ বলেছেন খুরানা।

 

মৃত খুরানার পরিবারও মনিকা পাহওয়া, তার বোন ও বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক হয়রানির অভিযোগ করেছে। তার বোনের মতে, অত্যাচার শুধুমাত্র আর্থিক চাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না বরং মানসিক নির্যাতনও করা হত। 

 

তিনি আরও দাবি করেছেন যে, মনিকা পাহওয়া খুরানার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেছেন এবং আরও অনেকের মাধ্যমে তাকে হয়রানি করেছে।

 

পুনীতের বোনের বক্তব্য ‘তিনি (মনিকা), তার বোন এবং তার বাবা-মা তাকে (খুরানাকে) মানসিকভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করেছেন। প্রায় ৫৯ মিনিটের একটি ভিডিও রেকর্ডিং রয়েছে, যাতে পুনীত সেসব হয়রানির বিবরণ দিয়ে গেছেন।’

 

খুরানার মা অভিযোগ করেছেন, কিছুদিন ধরে তার ছেলে চুপচাপ থাকতেন এবং নিজের কষ্টগুলো পরিবারের কারও সাথেও ভাগাভাগি করেনি। তিনি (মনিকা) তাকে নির্যাতন করতেন..আমি তার বিচার চাই।’

 

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মনমোহন সিংকে শেষ বিদায় জানালো ভারত

 

২০১৬ সালে মনিকা পাহওয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় পুনীতের। যৌথ মালিকানায় তারা একটি বেকারি চালাতেন। উডবক্স নামে একটি ক্যাফেরও মালিক ছিলেন তারা। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই বিষিয়ে ওঠে সম্পর্ক। বাধ্য হয়ে বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটেন এই দম্পতি। 

 

গত ৩০ ডিসেম্বর খুরানার মনিকা পাহওয়ার সাথে ফোনে উত্তপ্ত কথোপকথন হয়। যা রেকর্ড করা হয়েছিল এবং সেই রেকর্ড এখন পুলিশের কাছে রয়েছে। সেই কথোপকথনে সম্পত্তি ও তাদের যৌথ মালিকানাধীন বেকারি ব্যবসা নিয়ে তিক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে।

 

১৫ মিনিটের কলরেকর্ডে মনিকার পাহওয়াকে অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করতে এবং বিপরীতে পুনীতকে স্ত্রীর বিরুদ্ধে তার ‘জীবন ধ্বংস করার’ অভিযোগ করতে শোনা যায়। এরপর মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) খুরানা তার নিজের ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।  

সূত্র: এনডিটিভি

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন