যশোরের ফিরোজ হাসান আর তার ভাই। পাট চাষের সঙ্গে জড়িত বহু বছর ধরে। দেখেছেন সোনালী সময়ও। যদিও আগের চেয়ে পাট চাষ কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। তবে যখন পরিবেশ বাঁচাতে পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পাটজাত পণ্যকে সামনে আনার কথা হলো- তখন তার মতোই আরো অনেক পাটচাষিই নতুন করেন স্বপ্ন দেখছেন।
ফিরোজ বলেন, ‘মানুষ পাটের দাম পায় না। তাই পাট চাষ না করে অন্য কিছুর আবাদ করে। চাষ কমে যাওয়ায় পাটের ব্যাগও উৎপাদন হয় না। ফলে পলিথিন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাট দিয়ে যদি পলিথিনের চাহিদা মেটানো যায়, তাহলে চাষিদের উপকার আবার দেশের পরিবেশের জন্যও ভালো।’
কিন্তু বাস্তবতায় কেবলই এক রাশ নিরাশা। পাটচাষিরা বলছেন, মেইলকারখানা চালু থাকলেও পাটের দাম আরও বাড়তো। পলিথিন উঠিয়ে দিলেই পাটের চাহিদাও বাড়বে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে পলিথিনের বিপরীতে পাটের ব্যাগকে সহজলভ্য করার কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো পড়ে রয়েছে অকেজো।
এ ব্যাপারে কোনোভাবেই ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি নন পাটকল করপোরেশনের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কবির উদ্দিন সিকদার। যদিও জনসংযোগ কর্মকর্তা লিখিতভবে জানালেন, করপোরেশনের আওতায় থাকা ২৫টি পাটকলের ১৩টি চালু করতে এরই মধ্যে ইজারা দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে কাজ চলছে বাকিগুলোরও।
আরও পড়ুন: সিভিল এভিয়েশন এখনও চলছে ম্যানুয়ালিই, ‘সাইবার সিকিউরিটি সেল’ গঠনের উদ্যোগ
১৩টি পাটকল হলো- নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস লিমিটেড, ইউএমসি জুট মিলস লিমিটেড, খুলনার দৌলতপুর জুট মিলস লিমিটেড, আটরায় ইস্টার্ন জুট মিলস লিমিডেটড, খালিশপুর জুট মিলস লিমিটেড, দি ক্রিসেন্ট জুট মিলস লিমিটেড, যশোরের রাজঘাটে কার্পিটিং জুট মিলস লিমিটেড, জেজেআই লিমিটেড, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বারবকুণ্ডে গালফ্রা হাবিব লিমিটেড, নাসিরাবাদে মিলস ফারনিশিংস লিমিটেড, কুমিরায় গুল আহমদ জুট মিলস লিমিটেড, সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়ায় আর আর জুট মিলস লিমিটেড, বারো আউলিয়ায় হাফিজ জুট মিলস লিমিটেড।
পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নার্গীস আক্তার বলেন, ‘লোকজন বাজারের জন্য ২০ থেকে ২৫ টাকার ব্যাগ কিনবে না। তহালে কিছু সাবসিডি দিয়ে পাটের ব্যাগটাকে সামনে আনা যায়। পুরোনো যন্ত্র দিয়ে আমরা এখন ট্রায়াল এন্ড এরোর বেসিসে কাজ করছি। গবেষণার জন্য যন্ত্রের আধুনিকায়ন দরকার।’
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পাটের ব্যাগ তৈরির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে আমাদের যারা গবেষক যারা আছেন তাদের উৎসহিত করতে হবে। অবশ্যই পাট গবেষনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
পাটকে ব্যবহার করে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে কোনো পণ্য আনার সক্ষমতা অর্জন করতে পারলে সেটাও দেশের অর্থনীতিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
]]>