ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুটিং কনস্টেবল পদে ফরিদপুর থেকে ১ হাজার ২১১ জন আবেদন করেন। এরপর প্রতিটি কঠিন ধাপ অতিক্রম করে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৩৪৩ জন এবং ২৮ জন উত্তীর্ণ হয়। পরে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ২৩ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়। এর মধ্যে ২২জন ছেলে ও একজন মেয়ে।
তাদের মধ্যে তন্দ্রা আক্তারী একমাত্র নারী কনস্টেবল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। সে ফরিদপুর জেলা সদরের ঘনশ্যামপুর গ্রামের তোরাব বিশ্বাসের মেয়ে। তার এমন খবরে হাসি ফুটেছে বাবা-মা সহ আত্মীয়-স্বজনদের মুখে।
আবেগাপ্লুত হয়ে তন্দ্রা আক্তারী বলেন, ‘একজন মাহিন্দ্রা চালকের মেয়ে পুলিশে চাকরি মানে অনেক কিছু। মানুষ বলাবলি করেছিল টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে না। আমার বাবার পক্ষে ৮/১০ লাখ টাকা দিয়ে চাকরি দেয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু আমার যোগ্যতার মূল্যায়ন করা হয়েছে, মাত্র ২শ ২০ টাকার বিনিময়ে চাকরিটা হয়েছে। একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে আমার বাবার পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি গর্বিত।’
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে মাথায় আঘাত করে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ
মঙ্গলবার (০২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ লাইনসে গিয়ে দেখা যায়, চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ২৩ জন একত্রে জড়ো হয়েছে। এ সময় ট্রাক চালক বাবার ছেলে তামীম মণ্ডল চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সে জেলা শহরের রঘুনন্দনপুর এলাকার ট্রাক চালক সুমন মণ্ডলের ছেলে। মাত্র ২২০ টাকায় চাকরি হওয়া ও বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমের গল্প তুলে ধরে সে।
২৩ জনের মধ্যে অধিকাংশের গল্পটা যেন অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ জয়ের। বন্ধুর কাছ থেকে ১২০ টাকা হাওলাত নিয়ে আবেদন করেছিল সে। এরপর মৌখিক পরীক্ষায় বন্ধুর পোশাক ধার করে অংশগ্রহণ করেছিল সিয়াম মোল্যা। তার বাবা লাবলু মোল্যা পেশায় একজন শ্রমিক। অনুভূতি জানিয়ে সিয়াম বলেন, ‘ছোট সময় থেকে স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়ার। তাই আজ আমার মেধাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে, এ সাফল্য আমার বাবার হাত ধরেই পেয়েছি। অনেক কষ্ট করে আমার বাবা আমাকে পড়ালেখা করিয়েছে।’
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার আলোচিত সিকদার লিটন
ফরিদপুরের ট্রেইনি রিক্রুটিং কনস্টেবল পদের নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল বলেন, পুলিশের নিয়োগে অনেক সময় নানা বিষয় নিয়ে অভিযোগ উঠলেও ফরিদপুরে মেধা, যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছে। আমরা কারও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে নিয়োগও দিইনি। যারা নিয়োগ পেয়েছে প্রত্যেকেরই মেধা ও যোগ্যতার অনুসারে দেয়া হয়েছে। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে তারা দেশপ্রেম, ন্যায় ও সততার সাথে মানুষের কল্যাণে কাজ করবে।