সেপ্টেম্বরে একভরি স্বর্ণের দাম কত টাকা বাড়ল?

১ দিন আগে
সেপ্টেম্বর মাসে দেশের বাজারে মোট স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে ১২ বার। যার মধ্যে ১০ বারই বেড়েছে স্বর্ণের দাম। আর দুইবার কমানো হয়েছে মূল্যবান এই ধাতুর দাম। এই মাসে ২২ ক্যারেটের একভরি স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২১ হাজার ৬৬ টাকা।

সবশেষ গত সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দেশের বাজারে বাড়ানো হয়েছে স্বর্ণের দাম। সেদিন মূল্যবান এই ধাতুর দাম ভরিতে ২ হাজার ৪১৫ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।


নতুন দাম অনুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৪ টাকা। যা দেশের ইতিহাসে মূল্যবান এই ধাতুর সর্বোচ্চ দাম।


এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪৯৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৫৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩২ হাজার ৭২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।


চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট ৫৯ বার দেশের বাজারে সমন্বয় করা হয়েছে স্বর্ণের দাম। যেখানে দাম বাড়ানো হয়েছে ৪১ বার, আর কমেছে মাত্র ১৮ বার। আর ২০২৪ সালে দেশের বাজারে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। যেখানে ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছিল, আর কমানো হয়েছিল ২৭ বার।


এদিকে, বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন ডলার দুর্বল হওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার নিয়ে অনিশ্চয়তা, বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ধারাবাহিক সঞ্চয়, আর্থিক খাতের অস্থিতিশীলতা এবং ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা- সব মিলিয়েই এই ধাতুর দামকে আরও শক্তিশালী করেছে।


কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, ‘মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি বাজারের প্রত্যাশা অনুযায়ী একাধিকবার সুদের হার কমায়, তাহলে স্বর্ণের দামে সামনে আরও ঊর্ধ্বগতি দেখা যেতে পারে।’


ক্যাপিটাল ডটকমের আর্থিক বাজার বিশ্লেষক কাইল রোডা বলেন, ‘দুর্বল অর্থনৈতিক পরিবেশ এবং মার্কিন সুদের হার নিয়ে অনিশ্চয়তার প্রভাবেই মূল্যবান এই ধাতুর দাম বেড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত একটি বড় কারণ হল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেডের স্বাধীনতার ওপর সমালোচনা, যা মাসজুড়ে ডলারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে।’


এদিকে, সম্প্রতি সময় সংবাদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান ও বাজুস সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান জানান, চলতি মাসে অস্থির হয়ে উঠছে বাজার। এর পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার, বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো আগের তুলনায় স্বর্ণ মজুতের পরিমাণ। এছাড়া ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাবে বিশ্ববাজারে রেকর্ড দামে পৌঁছেছে স্বর্ণ। দেশেও স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে।


দেশের বাজারে দাম সমন্বয় প্রসঙ্গে তিনি জানান, বিশ্ববাজারে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম হলেও দেশে সেটি হয় না। অন্তত একদিনের ব্যবধানে দাম সমন্বয় করা হয়। শুধু বাংলাদেশেই না, বিশ্ববাজারে ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর সব দেশেই দাম সমন্বয় করতে বাধ্য হয়। তবে চলতি বছর এত দ্রুত এত বেশি বার দাম সমন্বয় হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাবে বিশ্ববাজার দোলাচলে থাকার কারণে।


স্বর্ণের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে জানিয়ে মাসুদুর রহমান আরও বলেন, দেশে স্বর্ণের দাম এখন ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকার ওপরে। বিশ্ববাজারে অস্থিরতা চলতে থাকলে এটি যে কোনো সময় ২ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ঊর্ধ্বমুখী এই দামে কমে গেছে বেচাকেনা, বেকার হয়ে পড়ছেন কারিগররা। তবে বিশ্ব পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে দাম কমে আসতে পারে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন