এটি এমন একটি সূরা, যা পড়ে আল্লাহর সাহায্য ও নিরাপত্তা লাভ করা যায়। নিচে সূরা ফালাকের পাঠ ও এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
সূরা ফালাক (সুরা-১১৩)
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ
مِن شَرِّ مَا خَلَقَ
وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ
وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ
وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
উচ্চারণ:
কুল আঊযুবিরাব্বিল ফালাক। মিন শাররি মা-খালাক। ওয়া মিন শাররি গা-ছিকিন ইযা-ওয়াকাব। ওয়া মিন শাররিন নাফফা-ছা-তি ফিল ‘উকাদ। ওয়া মিন শাররি হা-ছিদিন ইযা-হাছাদ।
বাংলা অর্থ:
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার,
তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে,
অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়,
গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে,
এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।
আরও পড়ুন: সুদান থেকে জেদ্দায় পৌঁছালো হজের প্রথম জাহাজ
হাদিস দ্বারা সুরা ফালাকের ফজিলত, হজরত ওকবা ইবনে আমের (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
হে ওকবা, তুমি আল্লাহর কাছে قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ অপেক্ষা অধিক প্রিয় এবং অধিক দ্রুত কবুল হওয়ার মত আর কোন সূরা পড়তে পার না। কাজেই নামাযে এই সূরা পড়া কখনো ছেড়ে দিও না। (ইবনে হিব্বান)
আরেকটি হাদিসে আছে, তোমরা লক্ষ্য করেছ কি, আজ রাতে এমন আয়াত নাজিল হয়েছে, যার সমতুল্য আয়াত তওরাত, ইনজিল, যবুর ও কোরআনেও নেই – তা হলো সূরা ফালাক ও সুরা নাস। (সহিহ মুসলিম)
এক সফরে রসুলুল্লাহ (সা.) ওকবা ইবনে আমের (রা)-কে এই দুটি সুরা শিখিয়েছিলেন, মাগরিবের নামাযে এই সূরাদ্বয় পাঠ করেন। তারপর বলেন, ঘুমাতে যাওয়ার সময় এবং ঘুম থেকে ওঠার সময় এই সূরা দুটি পাঠ কর। আরেক হাদিসে, প্রত্যেক নামাযের পর এই সূরাদ্বয় পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। (আবু দাউদ, নাসায়ি)
রোগ-মুসিবতে সুরা ফালাকের আমল
হজরত আয়েশা (রা) বলেন,
রসুলুল্লাহ (সা) যখন কোন রোগে আক্রান্ত হতেন, তখন সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করে নিজের হাতে ফুঁ দিতেন এবং সমস্ত শরীরে হাত বুলিয়ে নিতেন। ইন্তেকালের সময় তার রোগ যন্ত্রণা বেড়ে গেলে আমি তাঁর হয়ে এই সূরাদ্বয় পাঠ করে তাঁর হাতে ফুঁ দিতাম এবং তিনি তা শরীরে বুলিয়ে নিতেন। (ইবনে কাসির)
সকাল-সন্ধ্যায় আমলের গুরুত্ব
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হাবিব (রা) বলেন,
এক রাতে অন্ধকার ও বৃষ্টি ছিল, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে খুঁজে বের হলাম। তখন তিনি বললেন: ‘বল।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি বলব?’ তিনি বললেন, সুরা ইখলাস ও কুল আউয সূরাদ্বয়। সকাল ও সন্ধ্যায় তিনবার করে পাঠ করলে, সব ধরনের কষ্ট থেকে তুমি নিরাপদ থাকবে। (মাযহারী)
তাফসিরের দৃষ্টিতে সুরা ফালাক
فلق শব্দের অর্থ বিদীর্ণ হওয়া। এখানে উদ্দেশ্য হলো রাত্রি শেষে প্রভাতের আবির্ভাব। কোরআনের আরেক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেন فَالِقُ الإِصْبَاحِ – অর্থাৎ তিনি প্রভাতের উদয়কারী।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আরাফার রোজা কবে?
এতে বোঝানো হয়েছে, যেমনিভাবে আল্লাহ রাতের অন্ধকার ভেদ করে আলো প্রকাশ করেন, তেমনি তিনি যে কেউ তাঁর কাছে আশ্রয় চাইবে, তার মুসিবত দূর করে দিবেন।
সুরা ফালাক এমন এক আশ্রয় প্রার্থনার সূরা, যার মাধ্যমে একজন মুমিন ব্যক্তি দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন অনিষ্ট, হিংসা, জাদু, অন্ধকার রাত্রির বিপদ ও আল্লাহর সৃষ্ট অনিষ্ট থেকে রক্ষা পেতে পারেন। রসুলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবায়ে কিরাম এর উপর নিয়মিত আমল করতেন এবং তা আমাদের জন্যও সুস্পষ্ট পথনির্দেশনা। তাই আমাদের উচিত, সূরা ফালাককে অন্তরে ধারণ করা, নিয়মিত তিলাওয়াত করা ও আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করা।