স্বর্ণালি মৌসুমের গল্প
অক্টোবরের শুরুতেই যখন গাছের ডগায় ডগায় পাকতে শুরু করে সুপারি। তখনই বুঝে নেয় উখিয়া-টেকনাফের মানুষ-এসেছে তাদের সবচেয়ে জমজমাট সময়। এখন চলছে ভর মৌসুম। চলবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
ইনানী গ্রামের বাগান মালিক এখলাছুর রহমানের বাগানেও এবার সুখবর। ৪০ শতক জমির বাগানে রয়েছে ৪৫০-৫৩০টি সুপারি গাছ। ভালো ফলনের তিনি এরই মধ্যে বিক্রি করেছেন প্রায় ৪ লাখ টাকার সুপারি। তার চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি। তিনি বলেন, ‘এবারের ফলন এমনই হইয়ে, মনে শান্তি পাইছি।’
সোনারপাড়া- সুপারির সম্রাজ্য
প্রতি সপ্তাহের রোববার ও বুধবার উখিয়ার সোনারপাড়া হাট। এ দুইদিনে সোনারপাড়া হাট পরিণত হয় রঙিন এক মেলায়। বাজারের প্রতিটি স্থানে সাজানো থাকে সোনালি সুপারি। পাইকাররা আসেন দেশের নানা অঞ্চল থেকে-যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, যশোর ও সাতক্ষীরা পর্যন্ত।
সোনারপাড়া পান-সুপারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. সালামত উল্লাহ কালু বলেন, ‘প্রতিহাটে কোটি টাকার বেশি সুপারি বেচাকেনা হয়। দেশের বড় বড় পাইকাররা এখানেই আসে। কেবল অভ্যন্তরীণ বাজারেই নয়, এখানকার সুপারি রপ্তানিও হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই, সৌদি আরব, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে।’
ব্যবসায়ী আলী আকবর সওদাগর বলেন, ‘বিদেশি বাজারে কক্সবাজারের সুপারির বিশেষ কদর রয়েছে।’
ভালো দামে মুখে হাসি
এ মৌসুমে সুপারির দামও বেশি স্থিতিশীল। প্রতি পণ (৮০টি) বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। যা বাগান মালিকদের জন্য স্বস্তির। আর বাজারে ভালো দামে মুখে হাসি বাগান মালিকদের। সোনারপাড়া ছাড়াও কোটবাজার, মরিচ্যা, রুমখা, কুতুপালং, বালুখালী, শাপলাপুর, সাবরাংসহ অন্তত ১৫টি বাজারে এখন নিয়মিত সুপারির হাট বসে।
সোনারপাড়া পান-সুপারি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ইনানী, নিদানিয়া, মনখালি, মাদারবুনিয়া, সোনারপাড়া, জালিয়াপালং, সোনাইছড়ি, ভালুকিয়া, তুতুরবিলসহ ৬৪টি গ্রামে শত শত বাগানে সুপারির আশানুরূপ ফলন উৎপাদন হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় বেশ খুশি বাগান মালিকরা।’
বাম্পার ফলন
কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের হিসাব বলছে- উখিয়া উপজেলায় ৯৫০ হেক্টর এবং টেকনাফ উপজেলায় ১ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে। এ দুই উপজেলায় চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪০ হাজার ৭৮০ মেট্রিক টন-যা এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে বলে ধারণা কর্মকর্তাদের।
উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামানাশিস সরকার বলেন, ‘উপযুক্ত আবহাওয়া, প্রযুক্তির ব্যবহার ও পরিচর্যার কারণে এ বছর সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় উৎপাদন রেকর্ড ছাড়িয়েছে।’
টেকনাফ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আধুনিক রোপন পদ্ধতি, সংরক্ষণ এবং রোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বাগান মালিকদের। যার কারণে সুপারির ভাল ফলন পাচ্ছে বাগান মালিকরা।’
অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা
সুপারিকে ঘিরে উখিয়া-টেকনাফে বছরে ২০০-২২০ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. বিমল কুমার প্রমাণিক মনে করেন, সুপারি এখন এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল। স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। ফলে মানুষ দিন দিন নতুন বাগান করতে আগ্রহী হচ্ছে।
এই সুপারিই বদলে দিচ্ছে দক্ষিণ কক্সবাজারের গ্রামীণ অর্থনীতি; তৈরি করছে এক নতুন ‘সুপারির রাজধানী’ বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

১ দিন আগে
১








Bengali (BD) ·
English (US) ·