নেক্কার বন্ধু যেভাবে আপনার জীবন সুন্দর করে

১ ঘন্টা আগে
মানুষ তার সঙ্গের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে বা ভেঙে পড়ে। সৎ, নেক্কার ও আল্লাহভীরু মানুষের সঙ্গ অনুপ্রেরণা, শক্তি ও ঈমান বৃদ্ধি করে। বিপরীতে কু-সঙ্গী, গাফেল মানুষ, দ্বীনবিমুখ বন্ধু মানুষকে ধীরে ধীরে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। কুরআন ও হাদিসে সঙ্গ, সাহচর্যকে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে তা মানুষের ঈমানের স্থায়িত্ব কিংবা ধ্বংস,দুটো দিকই প্রভাবিত করে।

নেক্কার সঙ্গীর উপকারিতা

 

কুরআনুল করিমে আল্লাহ বলেন,

 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গ গ্রহণ করো। (সুরা তাওবা:১১৯) আল্লাহর কাছ থেকে সরাসরি আদেশ,সৎ ও সত্যবাদীদের পাশে থাকো। কারণ তাদের সঙ্গই মানুষকে সোজা পথে রাখে।

 

সঙ্গ ঈমানের মজবুত ভিত্তি

 

রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

اَلْمَرْءُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে উঠে। সুতরাং তার বন্ধু নির্বাচনের সময় এ বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত, সে কাকে বন্ধু নির্বাচন করছে। (সুনানুত তিরমিজি:২৩৭৮) যে সঙ্গীর মাঝে বাস করবে, তার চরিত্র, ঈমান ও অভ্যাস আপনার জীবনেও এসে পড়বে।

 

সৎ সঙ্গীর প্রভাব সুগন্ধির মতো

 

রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

الجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالسَّوْءِ، كَحَامِلِ المِسْكِ وَنَافِخِ الكِيرِ؛ فَحَامِلُ المِسْكِ، إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً সৎসঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হল, কস্তুরীওয়ালা ও কামারের হাপরের ন্যায়। কস্তুরীওয়ালা হয়ত তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তার নিকট হতে তুমি কিছু খরিদ করবে কিংবা তার নিকট হতে তুমি সুবাস পাবে। আর কামারের হাপর হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে কিংবা তুমি তার নিকট হতে পাবে দুর্গন্ধ। (সহিহ বুখারি: ৫৫৩৪; সহিহ মুসলিম: ২১০১) নেক্কার মানুষের সঙ্গে থাকলে তাদের আমল, আচার ও আল্লাহভীতি অজান্তেই আপনার হৃদয়ে ছাপ ফেলবে।

 

নেক বন্ধু গুনাহ থেকে রক্ষা করে

 

১. নেক্কার বন্ধু ২. ভুল হলে সতর্ক করে ৩. পরকাল স্মরণ করিয়ে দেয় ৪. নামাজ, ইবাদত, দান-খয়রাতের প্রতি উৎসাহিত করে ৫গিবত, ঝগড়া, হারাম ও অপব্যয়ে বাধা দেয় ৬.এমন সঙ্গ প্রকৃত সম্পদ, যা টাকা দিয়েও পাওয়া যায় না।

 

দুঃসময়ে সাহায্য ও আখিরাতে উপকার

 

যারা আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহ কিয়ামতের দিনে তাদেরকে বিশেষ ছায়া প্রদান করবেন। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللهِ، اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ সেই দুই ব্যক্তি, যাহারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালবাসে, তাহারা একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর জন্যই পৃথক হয়। (সহিহ বুখারি:৬৬০; সহিহ মুসলিম: ১০৩১)

 

কু-সঙ্গীর অপকারিতা

 

কু-সঙ্গীর কারণে পরকালেও আফসোস। আল্লাহ বলেন, সেদিন জালিম ব্যক্তি হাত কামড়াতে থাকবে। সে বলবে, হায় আফসোস! যদি অমুক ব্যক্তিকে আমি সঙ্গী না বানাতাম! (সূুরা ফুরকান:২৭-২৮) কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বড় আফসোস হবে,ভুল বন্ধুত্ব।


কু-সঙ্গ ধীরে ধীরে ঈমান নষ্ট করে

 

রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

খারাপ সহচর কামারের ধোঁয়াতুল্য; তুমি পোড়াও বা না পোড়াও, তার দুর্গন্ধ তোমায় লাগবেই। (সহিহ বুখারি: ৫৫৩৪; সহিহ মুসলিম: ২১০১)  কু-সঙ্গী আপনার চরিত্র, হৃদয়, আমল নষ্ট করবে,কারণ তার স্বভাব আপনার মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।

 

গুনাহের পথে টেনে নেয়

 

কু-সঙ্গী সাধারণত মানুষকে, ১. নামাজ থেকে দূরে রাখে ২. নাফরমানিতে অভ্যস্ত করে ৩. অশ্লীলতা ও হারাম কাজে উদ্বুদ্ধ করে ৪. পরিবারের প্রতি দায়িত্ব ভুলিয়ে দেয় ৫. গিবত, চোগলখুরি, মিথ্যা কথা শেখায় ৬. দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত রাখে ৭. একটু একটু করে মানুষ ঈমান হারাতে থাকে,বুঝতেও পারে না।

 

গাফেল মানুষদের বন্ধু করা নিষেধ

 

আল্লাহ বলেন, তুমি এমন ব্যক্তির আনুগত্য কোরো না, যার হৃদয়কে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি।  (সুরা কাহাফ:২৮) যারা আল্লাহকে ভাবে না, তাদের সঙ্গ ঈমানের জন্য হুমকি।

 

সঙ্গ পরিবর্তন করলে জীবন পরিবর্তন হয়। নেক্কার মানুষের সঙ্গ নসিব হওয়া আল্লাহর বড় রহমত। আর কু-সঙ্গীর সঙ্গ,একটি ধ্বংসাত্মক পরীক্ষা। তাই আমাদের করণীয়, নেক্কার, সত্যবাদী, আল্লাহভীরু মানুষদের সঙ্গ গ্রহণ করা। কু-সঙ্গী, গাফেল, গুনাহে লিপ্ত মানুষের সঙ্গ থেকে দূরে থাকা। শেষে দোয়া

 

اللهم ارزقنا صحبة الصالحين، وجنبنا صحبة الفاسقين  হে আল্লাহ! আমাদের নেক্কার মানুষের সঙ্গ দিন এবং কু-সঙ্গ থেকে বাঁচিয়ে রাখুন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন