সুন্দরবনের মধু ঘিরে নতুন সম্ভাবনা

২ দিন আগে
প্রাকৃতিক নানা পুষ্টি ও ওষধি গুনে ভরপুর সুন্দরবনের মধু ঘিরে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি সুন্দরবনের মধু ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃত পাওয়ার পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলজুড়ে ছড়িয়ে থাকা হাজারো মৌয়াল ও মধু ব্যবসায়ীদের জন্য এটি এক অনন্য অর্জন।

শুধু স্থানীয় নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও এখন নতুন পরিচয় নিয়ে হাজির হতে যাচ্ছে এই প্রাকৃতিক উপহার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই স্বীকৃতিকে ঘিরে খুলে যাচ্ছে নতুন বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দুয়ার। প্রয়োজন পরিকল্পিত উদ্যোগ, গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রণ।


প্রতিবছর এপ্রিল ও মে মাসে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহে যান প্রায় ছয় হাজার মৌয়াল। গহীন অরণ্যে বাঘের ভয় উপেক্ষা করে চাক ভাঙার এই বিপজ্জনক পেশা থেকে উঠে আসে সোনালি রঙের প্রাকৃতিক মধু। এবার সেই মধু পেয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। যা এই পেশার সঙ্গে জড়িত মানুষদের জন্য বড় প্রাপ্তি, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন: সুন্দরবনে হরিণ ধরার ৬শ’ ফাঁদ জব্দ

বাংলাদেশ বন বিভাগ জানিয়েছে, প্রতিবছর সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ থেকে আহরণ হয় প্রায় ৩৫০ মেট্রিক টন মধু, যেখানে ভারতের অংশ থেকে আহরণ হয় অর্ধেকের মতো। শুধু পরিমাণেই নয়, দেশী বিদেশী বিভিন্ন গবেষণা বলছে, গুণগত মানেও এগিয়ে বাংলাদেশের মধু। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে, সুন্দরবনের মধুতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদানসহ উচ্চ পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা একে বিশ্বের অন্যতম উৎকৃষ্ট প্রাকৃতিক মধুতে পরিণত করেছে।


তবে গত বছর ভারত সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায়, বাংলাদেশের বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন অধরা হয়ে পড়ছিলো। বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জাতীয় পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদফতরে আবেদন করা হলে অবশেষে বাংলাদেশের নামেই নিবন্ধিত হয় সুন্দরবনের মধু।


এ নিয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাসানুর রহমান বলেন, ‘এ স্বীকৃতি শুধু আমাদের গর্ব নয়, বিশ্ববাজারে পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর একটি বড় ধাপ।’


এই স্বীকৃতির মাধ্যমে উপকূলের হাজারো পরিবার অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবেন বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। ‘আলওয়ান মধু জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্র’-এর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মুহাম্মদ মঈনুল আনোয়ার বলেন, ‘মধুর গুণগত মান এবং উৎসের নির্ভরযোগ্যতা এখন বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে করে রপ্তানির পথ প্রশস্ত হবে।’

আরও পড়ুন: সুন্দরবনের মধুসহ জিআই সনদ পেল ২৪ নতুন পণ্য

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন দরকার বাজার ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পিত রোডম্যাপ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. নাজমুস সাদাত বলেন, ‘সুন্দরবনের মধুকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে মান নিয়ন্ত্রণ, গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিংয়ের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’


সবশেষ ৩০ এপ্রিল, ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ‘বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস’ অনুষ্ঠানে এ স্বীকৃতি প্রদান করে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদফতর। চলতি মৌসুমে সুন্দরবনে গেছেন সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মৌয়াল, যাদের সংগ্রহ করা মধুর পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৩৫০ টনের কাছাকাছি। গত অর্থবছরে মধু আহরণ থেকে সরকার পেয়েছে অর্ধকোটি টাকার বেশি রাজস্ব।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন