সুন্দর মৃত্যু পেতে যে ৫ আমল করবেন

২ সপ্তাহ আগে
প্রত্যেক মানুষ এই পৃথিবীতে এসেছে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কারো জীবনের শুরু যেমন অবধারিত, তেমনি শেষ অর্থাৎ মৃত্যুও অনিবার্য।

কিন্তু মৃত্যু শুধু একটি শেষ নয়; বরং তা একটি নতুন জীবনের শুরু, চিরস্থায়ী আখিরাতের। তাই একজন ঈমানদার মুসলমানের চাওয়া হওয়া উচিত শুধু মৃত্যুই নয়, সুন্দর মৃত্যু, অর্থাৎ হুসনে খাতিমা, আল্লাহর সন্তুষ্টি নিয়ে, ঈমানের সঙ্গে, নেক আমলের অবস্থায় ঘটে।

 

চোখের হেফাজত করা

 
কেননা কুদৃষ্টির সাময়িক ও তুচ্ছ স্বাদ ছেড়ে দিলে ঈমানের স্থায়ী মিষ্টতা ভাগ্যে জুটে। হাদীসে কুদসীতে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন যে, আল্লাহ তাআলা বলেন,

 

আরও পড়ুন: হিজরি নতুন বছর হোক আত্মমূল্যায়ন ও আত্মশুদ্ধির

 

مَنْ تَرَكَهَا مِنْ مَخَافَتِىْ اَبْدَلْتُهُ إِيْمَاناً يَجِدُ حَلَاوَتَه فِىْ قَلْبِه যে আমার ভয়ে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবে, আমি অন্তরে এমন ঈমান সৃষ্টি করব, যাতে সে তার স্বাদ পাবে। (আততারগীব ওয়াততারহীব: ২/৩৭)


 

এজন্য আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টির হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা পুরুষজাতির উদ্দেশ্যে বলেন,

 

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ হে নবী! আপনি মুমিনদেরকে বলে দিন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্রতা। তারা যা করে মহান আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সুরা নূর : ৩০)


মিসওয়াক করা


টুথব্রাশ এবং মিসওয়াক উভয়টাই দাঁত পরিষ্কার করে। তবে ব্রাশ করলে দাঁত পরিষ্কার করার সাওয়াব হয়ত পাবেন; কিন্তু মিসওয়াকের ফজিলত পাবেন না।  মিসওয়াকের ফজিলত পেতে হলে মিসওয়াকই করতে হবে। হাদিস শরিফে রসলুল্লাহ সা. বলেছেন,


السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা, রবের সন্তুষ্টির মাধ্যম। (সুনানে ইবনে মাজাহ:  ২৮৯)


 

আর আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিই তো মুমিনের সবচেয়ে বড় চাওয়া ও পরম পাওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন
وَرِضْوَانٌ مِنَ اللَّهِ أَكْبَرُ আর আল্লাহর সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড় বিষয়। (সুরা তাওবা : ৭২)


সবসময়ই অজুর সঙ্গে থাকা


অজু ছুটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে অজু করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। ইমাম গাযালী রহ. বলতেন, যখন অজু করবে তখন তোমার অন্তরের দিকে তাকিয়ে দেখো। দেখবে, অযু করার আগের অবস্থা এবং পরের অবস্থা এক নয়। অযু করলে অন্তর নূরানী হয়ে যায়। যার ফলে অন্তরে অপার্থিব প্রশান্তি অনুভূত হয়।

 

হাসান বসরী রহ. বলেন, অনেক আল্লাহওয়ালাদের অবস্থা এমন ছিল যে, তারা নিজেদের সঙ্গে পানির একটি ছোট পাত্র রাখতেন। যাতে করে কোথাও ইস্তেঞ্জার প্রয়োজন দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে যেন অযু করে নিতে পারেন। কেননা, এমন যেন না হয় ইস্তেঞ্জার পর পানির সন্ধান করতে করতে মৃত্যুর ডাক এসে পড়ে। (ইবনু আবিদ্দুনয়া, ক্বাসরুল আমল : ৪৩)

 

আজানের জবাব দেয়া


যখন আজান কানে আসবে তখন যত ব্যস্ততাই থাকুক; চুপ হয়ে যাবেন। মনোযোগ-সহকারে শুনবেন এবং আজনের বাক্যগুলোর উত্তর সুন্নাহ পদ্ধতিতে দিবেন। তারপর মাসনূন দোয়া পড়বেন। এই পুরো আমলটাও শুভ-মৃত্যুর কারণ।
জনৈক নেককার মহিলার ঘটনা


হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত শাহ আশরাফ আলী থানবী রহ. ঘটনা লিখেছেন, জনৈক নেককার মহিলা যখন মারা যাচ্ছিল, তখন এমন ভাষায় কথা বলতে লাগল যে, ঘরের লোকজন সে ভাষা বুঝে ওঠছিল না। তাই তারা তাদের এক নিকটাত্মীয় আলেমকে ডেকে পাঠাল। ওই আলেম এসে দেখলেন, মহিলাটি মৃত্যুশয্যায় শায়িত এবং বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে যাচ্ছে। ভালো করে ইল্লাল্লাহ-এর জিকির।


হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. বলতেন, যে ব্যক্তি নিজের জিন্দেগিতে কালিমা মনে রাখবে, মৃত্যুকালে কালিমা তার মনে পড়ে যাবে। যাপিত জীবনে যে কালিমা ভুলবে না, মৃত্যুকালে কালিমা তাকে ভুলবে না। মৃত্যুর সময়ে লাইলা, হা ইল্লাল্লাহ বলা সহজ হবে। 

 

আরও পড়ুন: নামাজের বৈঠকে কখন শাহাদাত আঙুল ইশারা করবেন?  

 

রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,

 

مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ عِنْدَ الْمَوْتِ، هَدَمَتْ مَا قَبْلَهَا قَالُوا: وَكَيْفَ هِيَ فِي الْحَيَاةِ؟ قَالَ: أَهْدَمُ وَأَهْدَمُ যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময়ে লা,ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, যদি কেউ জীবিত অবস্থায় বলে, তাহলে তার কী হবে?নবীজি সা. উত্তর দিলেন, গুনাহসমূহ আরো অধিক ধ্বংসকারী এবং আরো অধিক ধ্বংসকারী। (ইবনু আবিদদ্দুনয়া, কিতাবুল মুহতাযারীন : ০৩)


 

সাদকা করা


রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,

 

الصَّدَقَةُ تَدفَعُ مِيتَةَ السُّوءِ সাদকা খারাপ মৃত্যুকে দূরীভূত করে। (জামে সগির: ৫১২৬) অপর হাদীসে রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন مَنْ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ خُتِمَ لَهُ بِهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ যে ব্যক্তি কোন একটি সাদকা করল এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলো সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসনাদে আহমাদ : ২২৮১৩)

 

 

 

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন