বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় বাড়ির আঙিনায় কাজ করার সময় প্রতিবেশী সুদর্শন দাসের ছেলে মানিক লাল দাস (৩০) ওই ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। মেয়েটির চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে অভিযুক্ত মানিক লাল দাস পালিয়ে যায়।
অভিযুক্ত মাতব্বররা হলেন, রণজিৎ সরকার, বকুল দাস, বিকাশ দাস, সচিন্দ দাস, রানু দাস, কৃষ্ণপদ দাস, রাজ কুমার দাস, সোমচাঁদ দাস, সুনীল দাস, ইন্দ্রজিৎ দাস, সজল দাস, আশিষ দাস ও কেনু দাস।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, গ্রামের তিন পাড়ার মাতব্বররা জড়ো হয়ে অভিযুক্ত যুবককে ভবিষ্যতে এসব না করার জন্য বলে দেন। মাতব্বরদের সামাজিক সালিশের রায়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় প্রতিবাদী মানুষ অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
গ্রাম্য সালিশের কথা স্বীকার করে রণজিৎ সরকার বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য দ্বিজেন্দ্রসহ অনেকেই সালিশে উপস্থিত ছিলেন। সালিশের অনেক পরে অভিযুক্ত মানিক লাল দাস অনেকটা নেশাগ্রস্ত হয়ে আসেন। তাই বিষয়টি সমাধান হয়নি।
আরও পড়ুন: ধর্ষণ থেকে বাঁচতে চলন্ত অটোরিকশা থেকে কিশোরীর লাফ, আটক ২
স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনন্ত লাল দাস জানান, ঘটনাটি সালিশের মাধ্যমে সামাজিকভাবে শেষ হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে এ ধরনের ঘটনা সামাজিক সালিশে শেষ হলে অপরাধ প্রবণতা বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
বিকাশ দাস জানান, বিষয়টি নিয়ে গ্রামে সালিশ বৈঠক হয়েছে। অভিযুক্ত মানিক লাল দাসকে সালিশি শাসন করে এ ধরনের ঘটনা না করার কথা বলেন উপস্থিত সালিশি ব্যক্তিরা। যদিও এ ধরনের ঘটনা সালিশে শেষ করার কোনো অধিকার নেই গ্রামের মাতব্বরদের। তারপরও তারা সালিশ করে আইন অমান্য করেছেন। আগে এরকম অনেক ঘটনা সামাজিক সালিশে শেষ করার নজির আছে। এজন্য অপরাধীদের সাহস দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্কুলছাত্রীর মা জানান, রান্নার জন্য লাকড়ির বস্তা নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে দেখেন, বাড়ির আঙিনায় কর্মরত অবস্থায় গ্রামের অভিযুক্ত প্রভাবশালী ধনাঢ্য পরিবারের যুবক মানিক লাল দাস তার মেয়েকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করছে। এ সময় তার হাত থেকে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করে মেয়েটি। ঘটনাস্থলে মায়ের উপস্থিতি টের পেয়ে মানিক পালিয়ে যায়। এ ঘটনা গ্রামে জানাজানি হলে সমাজপতিরা বিষয়টি গোপন রাখতে নির্দেশ দেন ও সামাজিক সালিশে বিচারের কথা বলেন।
প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য সমাজপতিদের ভয়ে তিনি তাদের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য হন। কিন্তু সমাজপতিরা সালিশে বিচারের নামে অভিযুক্তকে মৃদু শাসন করে বিষয়টি সমাধান করে দেন। যা তিনি ও গ্রামের প্রতিবাদী মানুষ মানতে পারেননি। সমাজপতিদের বিচার না মানায় তিনি প্রভাবশালী সালিশকারী পঞ্চায়েতের চাপ ও ভীতিকর অবস্থায় রয়েছেন।
আরও পড়ুন: মেজর পরিচয়ে শ্বশুর বাড়িতে প্রভাব বিস্তার, অতঃপর...
এ বিষয়ে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সামাজিক সালিশে এ ধরনের ঘটনা নিয়ে কোনো সালিশ বৈঠক হতে পারে না। এ ধরনের ঘটনায় সামাজিক সালিশ আইনবিরোধী কাজ। পুলিশ অভিযুক্ত মানিক ও সালিশকারীদের ধরতে শুক্রবার রাত থেকে অভিযান চালাচ্ছে।’
পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘অভিযুক্ত মানিক ও সালিশকারীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে। এ ধরনের ঘটনার সামাজিক সালিশে বিচার করা আইনের ব্যত্যয়। গ্রামের নিরীহ লোকজন জানান, অভিযুক্ত যুবক মানিক লাল দাস একই রকম আরও তিনটি ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী ধনী পরিবারের সন্তান ও গ্রামে প্রভাব-প্রতিপত্তির জোরে মাতব্বররা সামাজিক সালিশ ও ভুক্তভোগীর পরিবারকে টাকা-পয়সা দিয়ে ঘটনা সমাধান করে দেয়। তাই ইজ্জত রক্ষায় পেশিশক্তি ও অর্থশক্তির প্রভাবে মামলা করেনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।’
]]>