সুখী হতে প্রশংসার প্রয়োজন নেই, ফুটবলই আমার আনন্দ: আলভারেজ

২ সপ্তাহ আগে
হুলিয়ান আলভারেজ এখন অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের আক্রমণভাগের নেতা এবং সম্ভবত দিয়েগো সিমিওনের দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ও। আর্জেন্টাইন এই ফরোয়ার্ডের একটা চোখ সবসময় প্রতিপক্ষের গোলের ওপর থাকে, যার প্রমাণ এ মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মিলিয়ে এরই মধ্যে নয়টি গোল করেছেন তিনি। যার মধ্যে সাতটি করেছেন লা লিগায়, যা তাকে পিচিচি ট্রফির দৌড়ে দ্বিতীয় স্থানে রেখেছে।

আর্জেন্টিনার বিখ্যাত ক্লাব রিভারপ্লেট থেকে উত্থানের পর ম্যানচেস্টার সিটির সর্বজয়ী স্কোয়াডের সদস্য হওয়া, এরপর লা লিগায় পাড়ি–হুলিয়ান আলভারেজের ফুটবলযাত্রা রূপকথার গল্পের মতো সাফল্যমণ্ডিত। ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। সম্ভাব্য সকল শিরোপাই আলভারেজের এরই মধ্যে জেতা হয়ে গেছে।  


ফরাসি পত্রিকা লে’কিপের সঙ্গে খোলামেলা এক সাক্ষাৎকারে আলভারেজ তার পুরো ফুটবলযাত্রা তুলে ধরেছেন। আর্জেন্টিনা ছাড়ার সময় থেকে শুরু করে ইংল্যান্ড এবং তারপর স্পেনের অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ–সবখানেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন হিসেবে।


শৈশবে রিয়াল মাদ্রিদে ট্রায়াল:

 

রিয়াল মাদ্রিদের বেলিংহ্যামের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে আলভারেজ। শৈশবে রিয়াল মাদ্রিদে ট্রায়াল দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আলভারেজ। ছবি: রয়টার্স

 

আলভারেজ এই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, শৈশবে তিনি রিয়াল মাদ্রিদে ট্রায়াল দিয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে তার মনে হয়েছে তখনও ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার সময় তার হয়নি। তার ভাষায়, ‘আমার বয়স তখন ১১। বাবার সঙ্গে আমি স্পেনে যাই প্রায় ২০ দিনের জন্য। রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে অনুশীলন করেছিলাম এবং পরে পেরালাদায় এক টুর্নামেন্টে খেলি, যেখানে আমরা চ্যাম্পিয়ন হই। কিন্তু থাকতে হলে পুরো পরিবারকে স্পেনে চলে আসতে হতো। অভিজ্ঞতাটা ছিল দুর্দান্ত, তবে তখন আমার জন্য সেটা অনেক তাড়াতাড়ি ছিল।’


আরও পড়ুন: আর্জেন্টিনা দলে রাখলেও নাম সরিয়ে নিলেন এনজো ফার্নান্দেজ


প্রতিবন্ধকতা যখন উচ্চতা:


আধুনিক ফুটবলে যেখানে শারীরিক সক্ষমতা এত গুরুত্ব পায়, সেখানে ইউরোপের শীর্ষ কোনো দলের সেন্টার ফরোয়ার্ডের উচ্চতা মাত্র ১.৭০ মিটার হওয়া বিরল ব্যাপার। আলভারেজ জানেন, তার উচ্চতা নিয়ে সবসময় প্রশ্ন উঠেছে, ‘রিভার প্লেটের প্রথম ট্রায়ালের কথাটা এখনো মনে আছে। ওরা জিজ্ঞেস করল—“কোন সালে জন্ম?” আমি বললাম, “২০০০”। আবার জিজ্ঞেস করল—“পজিশন?” আমি বললাম, “নম্বর ৯”। তখন ওরা এক বিশালদেহী ছেলেকে দেখিয়ে বলল, “এই যে তোমাদের বয়সের আসল ৯ নম্বর!” কিন্তু আমি চিন্তিত হইনি। আমি জানতাম, আমার নিজের শক্তি কোথায়। আমি সামনে, একটু পেছনে, ডান-বামে—সব জায়গায় খেলতে পারি। আমার জন্য কখনো সেটা সমস্যা হয়নি।’


আলভারেজের অসাধারণ মানসিকতা:


আধুনিক ফুটবলে ট্যাটুহীন কোনো খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু আলভারেজ সে দিক থেকেও ব্যতিক্রমী।


শরীরে কোনো ট্যাটু না করার কারণ জানাতে গিয়ে আলভারেজ বলেন, ‘জাতীয় দলে একদিন কেউ আমাকে বলল—আমি নাকি একমাত্র খেলোয়াড়, যার শরীরে কোনো ট্যাটু নেই। আমি আলাদা হতে চাই বলেই ট্যাটু করি না। ছোটবেলায় বাবা সবসময় বলতেন—“না ট্যাটু, না সিগারেট, না অ্যালকোহল।” বড় হয়ে সবাই নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু আমার ট্যাটুর দরকার মনে হয় না। আমি খুব শান্ত প্রকৃতির, ঘরে প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটাতেই সবচেয়ে সুখী থাকি।’


 

আর্লিং হলান্ডের জন্য নিয়মিত সুযোগ পেতেন না ম্যানসিটিতে। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি ছাড়ার কারণ ছিল এটিই। ছবি: রয়টার্স


ম্যানসিটি ছেড়ে অ্যাতলেটিকোয় যোগ দেয়ার কারণ:


ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে দুই মৌসুমে আলভারেজ ৬,০০৭ মিনিট খেলে ৩৬ গোল করেছেন। তবু আর্লিং হালান্ডের উপস্থিতিতে তিনি ততটা আলোচনায় আসতে পারেননি। আর এ কারণেই তিনি স্পেনে আসার সিদ্ধান্ত নেন।


এই আর্জেন্টাইন তারকা বলেন, ‘আমি অনেক সময় খেলেছি, কিন্তু সব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নয়। বেশিরভাগ সময় বদলি হিসেবে নামতাম। অনেক ক্লাব থেকে প্রস্তাব পেয়েছিলাম। আমি অ্যাতলেটিকোকে বেছে নিয়েছি, কারণ মনে হয়েছে এখানে আমি নিজের জায়গা তৈরি করতে পারব এবং সর্বোচ্চটা দিতে পারব।’


আরও পড়ুন: জোড়া গোল ও অ্যাসিস্টের ম্যাচে মেসির রেকর্ড, মায়ামি উঠলো সেমিফাইনালে


 

দারুণ ফ্রিকিক নিতে পারেন আলভারেজ। ছবি: রয়টার্স


দলবদলের গুঞ্জন:


আলভারেজের নাম নিয়মিতই উঠে আসে ট্রান্সফার মার্কেটে। কখনো বলা হয় বার্সেলোনা লেভানদভস্কির বিকল্প হিসেবে তাকে চায়, আবার কখনো পিএসজির আগ্রহের কথাও শোনা যায়। কিন্তু আলভারেজ এখন পুরো মনোযোগ দিয়েছেন অ্যাতলেটিকোতেই।


তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি জানি না কী হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক কিছু লেখা হয়… স্পেনে আমার আর বার্সেলোনার নাম নিয়ে অনেক কথা হয়। গত বছর যখন অ্যাতলেটিকোতে সাইন করেছিলাম, তখনও প্যারিস (পিএসজি)-এর কথাও উঠেছিল। হ্যাঁ, ওদের বোর্ড আর আমার এজেন্টের মধ্যে কিছু কথা হয়েছিল, আগ্রহও দেখিয়েছিল, কিন্তু চুক্তি হয়নি। আপাতত আমি অ্যাতলেটিকোতেই মনোযোগ দিচ্ছি। মৌসুম শেষে দেখা যাবে কী হয়।’


ব্যালন ডি’অর ও ব্যক্তিগত সাফল্য নিয়ে ভাবনা:


গত কয়েক মৌসুমে আলভারেজের পারফরম্যান্স তাকে বলন ডি’অরের প্রতিযোগীদের মধ্যে জায়গা দিয়েছে, যদিও কখনো জেতার জন্য ফেভারিট ছিলেন না। ২০২৩ সালে তিনি সপ্তম হয়েছিলেন, কিন্তু গত দুই বছরে ৩০ জনের তালিকায়ও জায়গা হয়নি তার।


তবে আলভারেজের কাছে ফুটবল খেলতে পারাটাই আনন্দের, এর জন্য ব্যালন ডি’অরের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন না তিনি, ‘বিশ্বের সেরা ৩০ জনের মধ্যে থাকা একটা সম্মানের বিষয়। এটা প্রমাণ করে তুমি ভালো কিছু করছো। আমি গর্বিত, কিন্তু এটা নিয়ে চিন্তা করি না। আমি যা ভালোবাসি, সেটা করছি—ফুটবল খেলছি। সুখী হতে প্রশংসার প্রয়োজন নেই, ফুটবলই আমার আনন্দ।’


আরও পড়ুন: ৮ ম্যাচ পর গোল হজম করলো আর্সেনাল, চেলসির জয়


কোচ সিমিওনের সঙ্গে সম্পর্ক:


শেষে তিনি বলেন, তার ভালো পারফরম্যান্সের মূল কারণ কোচ সিমিওনের আস্থা ও সম্পর্ক, ‘আমাদের ফুটবলের দৃষ্টিভঙ্গি এক—উদ্দীপনা, পরিশ্রম, নিবেদন, কখনো হাল না ছাড়া, বিশ্বাস রাখা। মাঠে তিনি আমাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেন। আমাদের সম্পর্ক খুবই ইতিবাচক।’

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন