অতীতের বহু মহীয়সী মায়েরা তাদের সুশিক্ষা ও দীনদার জীবনের মাধ্যমে সন্তানদের আল্লাহওয়ালা বানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ইসলামিক শিক্ষার আলোকে মায়েদের গুরুত্ব ও দায়িত্ব তুলে ধরা জরুরি।
হজরত আবু হুরাইরা রা. তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘উটে আরোহনকারীনি মহিলাদের মধ্যে কুরাইশ বংশীয় মহিলারা সর্বোত্তম। (কারণ) তারা শিশু সন্তানদের প্রতি স্নেহশীল এবং স্বামীর মর্যাদার উত্তম হেফাজতকারীনি হয়ে থাকে।’
আরও পড়ুন: কাজা নামাজ জামাতে আদায় করা যাবে?
সন্তান লালন-পালন ও শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে মায়ের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সন্তান অধিকাংশ সময় মায়ের সাথেই থাকে। যদি মায়ের আদব-কায়দা, স্বভাব-চরিত্র ভালো থাকে, তখন এই গুণগুলো সন্তানের মধ্যেও চলে আসে। আর যদি উল্টা হয়, তখন সন্তানের মন-মস্তিস্কও বিগড়ে যায়। এজন্য সন্তানদেরকে আদব-আখলাক শিক্ষা দেওয়ার আগে সর্বপ্রথম মা-র মধ্যেই এসব গুণাবলি থাকতে হবে। মায়ের মধ্যে আদব-আখলাক, তাকওয়া-পরহেজগারি থাকতে হবে।
পৃথিবীতে এমন অনেক গুণবতী মহান ‘মা’ অতীত হয়েছেন, যারা সন্তান গর্ভে থাকার পুরো সময় ১০ মাস ওজুর সাথে কাটিয়েছেন। পবিত্র কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করেছেন। ওজুর সাথে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে সন্তানকে দুধ পান করিয়েছেন। এমন মহান মায়েদের সন্তানই ভবিষ্যতে এসে ‘আল্লাহওয়ালা’ হয়।
কিন্তু আফসোস! বর্তমানে সন্তান পেটে আসা ও দুধ পানের সময়গুলো মেয়েরা গুনাহের কাজে কাটিয়ে দেয়। উদাসীনতায় নাপাক অবস্থায় সময়গুলো পার করে দেয়। মায়ের এসব অপকর্মের খারাপ প্রভাব তখন সন্তানের ওপরও গিয়ে বিস্তার লাভ করে।
সন্তানকে ভালো আদব-আখলাক শিক্ষা দেওয়া দীনি একটি ফরজ কাজ। ‘বাচ্চাদেরকে স্নেহ, আদব-কায়দা ও শিক্ষাদীক্ষা প্রদান করার জন্য হাদিস শরিফে তাকিদ এসেছে। এক্ষেত্রে কমতি করলে পরকালে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। সন্তানকে সঠিকভাবে সুশিক্ষা দেওয়ার ফলে সন্তান দুনিয়াতেও চোখের শীতল হয় এবং মৃত্যুর পরও সদকায়ে জারিয়ার মাধ্যম হয়।
অন্যথায় এই সন্তানই পরকালে আল্লাহ তায়ালার কাছে মা-বাবার দ্বিগুণ শাস্তি কামনা করবে। (সুরা আহযাব: আয়াত- ৬৭) আদব-কায়দা, শিক্ষাদীক্ষা অত্যন্ত দয়ামায়ার সাথে করা উচিত। কুরাইশ মহিলাদেরকে এই মহৎ গুনের কারণেই ‘সর্বোত্তম মহিলা’ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কারণ, তারা নিজেদের সন্তানের সাথে স্নেহের ব্যবহার করতো।
আফসোস! বর্তমানে এমন অনেক নির্দয় ‘মা’ আছে, যারা সন্তানকে অযথায় মারতে থাকে। এটি অনেক খারাপ অভ্যাস। এর দ্বারা সন্তান মা-বাবা থেকে দূরে সরে যায়।
সন্তানকে বদদোয়া দেওয়া থেকেও বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, জানা নেই কখন দোয়া কবুল হয়ে যায়। আর এই বদদোয়ার কারণে সন্তান বিপদের সম্মুখীন হয়ে যায়।
প্রিয় মেয়েরা! বাচ্চাদের মধ্যে তাওহিদ তথা ‘আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের’ আকিদাকে ছোটো সময় থেকেই মজবুতভাবে শিক্ষা দেওয়া উচিত। তাদের অন্তরে আল্লাহ তায়ালার মহত্ত্বতা দৃঢ় করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহব্বত সৃষ্টি করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনচরিত, সাহাবাগণের (রা.) জীবনচরিত, আল্লাহওয়ালাদের জীবনচরিত এবং ভালো ভালো ঘটনাগুলোকে গল্পের আকারে তাদেরকে শোনানো উচিত। কার্টুন এবং অপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম থেকে যথাসম্ভব তাদেরকে দূরে রাখা।
বাজে মানুষদের সংশ্রব এবং খারাপ অভ্যাস থেকে তাদেরকে বিরত রাখার চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা। তাদেরকে ভালো চরিত্র, আদব-আখলাক শেখানো। দীন শিক্ষার জন্য মাদরাসায় পাঠানো। তাদের ভেতর সুন্দর হওয়ার জন্য আল্লাহওয়ালাদের মজলিসে ছোটো বয়স থেকেই আসা-যাওয়া করানোর অভ্যাস করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমলের তাওফিক দান করুন।
আরও পড়ুন: মাত্র ৯ মাসে কোরআনের হাফেজা ৬ বছরের সাফিয়্যা
সন্তানের লালন-পালন ও সুশিক্ষা কোনো সাধারণ দায়িত্ব নয়; এটি একটি দীনি ফরজ কাজ। সন্তানের ভালো চরিত্র ও আখলাক তৈরি করতে মাকে নিজের জীবনেও তাকওয়া, পরহেজগারি ও আদর্শিক গুণাবলি অর্জন করতে হবে। প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবাদের জীবনের শিক্ষা দিয়ে সন্তানদের অন্তরে তাওহিদের বীজ রোপণ করতে হবে। বর্তমান যুগে সন্তানদের কার্টুন ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত রেখে ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এ মহান দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের তাওফিক দিন এবং আমাদের সন্তানদের আল্লাহভীরু বানান।
]]>