সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার বিচার আর্ন্তজাতিক আদালতে করতে হবে: সারজিস

২ সপ্তাহ আগে
সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার প্রতিটি ঘটনার আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয় সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্তে কোনো লাশ দেখতে চাই না।’

সারজিত বলেন, ‘আর যদি আমার কোনো ভাই বা বোনের লাশ আমাদের ওই সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকে তাহলে কাঁটাতারকে লক্ষ্য করে আজকের ‘মার্চ ফর ফেলানী’র মত লং মার্চ করা হবে। আর যদি পরবর্তীতে আমাদের সেই মার্চ তাঁরকাটাকে উদ্দেশ্য করে হয় তাহলে আমাদের দৃষ্টি তাঁরকাটাকে ভেদ করে যতদূর যাবে, লং মার্চও ততদূর যাবে।


বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে ফেলানীর বাড়ির পাশে রামখানা ইউনিয়নের দীঘিরপাড় এলাকায় জনসভায় বক্তব্যে সারজিস এসব কথা বলেন।


এর আগে ফেলানী হত্যাসহ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সকল বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডের বিচার আর্ন্তজাতিক আদালতে করার দাবিতে কুড়িগ্রামে শহরে ‘মার্চ ফর ফেলানী’ কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার পর নাগেশ্বরীর নাখারগঞ্জ বাজারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি। সকাল ১১ টায় জেলা শহরের কলেজ মোড় থেকে লং মার্চটি শুরু হয়। শেষ হয় কুড়িগ্রামের নাগশ্বরী উপজেলা রামখানা ইউনিয়নের নাখারগঞ্জ গ্রামে ফেলানীর বাড়িতে।


জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে এতে আরও যোগ দেন আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দফতর সম্পাদক জাহিদ আহসান, সমন্বয়ক রকিব মাসুদসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়াও লং মার্চে ফেলানীর বাবা নুর ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।


এ সময় সারজিস বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশকে একটি কথাই বলতে চাই, এই যে সীমান্ত হত্যা, কাঁটাতার দেয়ার নামে জোর করে বাঁধা দেয়ার যে প্রয়াস তা রুখে দেয়ার জন্য নতুন করে যে অভ্যূত্থান হয়েছে এই অভ্যূত্থানের স্ফুলিঙ্গ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়া হবে।’


আরও পড়ুন: সীমান্তে আর কোনো লাশ দেখতে চাই না: সারজিস আলম


তিনি বলেন, ‘কুড়িগ্রামে মার্চ ফর ফেলানী থেকে বলতে চাই আমরা বাংলাদেশের সীমান্তে কোন লাশ দেখতে চাই না। বাংলাদেশের যত নাগরিককে সীমান্তে লাশ করা হয়েছে তার বিচার আর্ন্তজাতিক আদালতে করতে হবে।’


তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রজনতা আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশ দিয়েছে সেই ছাত্র জনতা নতজানু পররাষ্ট্র নীতি মেনে নেবে না। আগামীতে বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা যদি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার জন্য কোন দেশের দালাল হোন তাহলে তাদের পরিণতি খুনি হাসিনার মতো হবে।’


লং মার্চের শুরুতে ফেলানী হত্যাসহ সীমান্তে সকল নাগরিক হত্যার বিচার, সীমান্তে মরণঘাতী অস্ত্র বন্ধ, শহীদ ফেলানীর নামে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের নামকরণ, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বাতিল করে সাম্যের ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ ও কুড়িগ্রামের চরের জীবন জীবিকা উন্নয়নে নদী সংস্কারের ৫ দফা দাবি জানান সারজিস আলম।


পরে লং মার্চটি সকাল ১১ টার পরে কুড়িগ্রামের জেলা শহরের কলেজ মোড় থেকে যাত্রা শুরু করে। প্রায় তিন কিলোমিটার পায়ে হেটে লংমার্চটি জেলা শহরের রিভারভিউ মোড়ে এসে ভ্যানে করে ফেলানীর বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়। জেলা শহর থেকে ফেলানীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে বিভিন্ন হাট বাজারে লং মার্চ থামিয়ে সীমান্ত হত্যা বন্ধে সাধারণ মানুষকে সোচ্চার করতে বক্তব্য দেন সারজিস আলম।


নাগেশ্বরী উপজেলার দীঘির পাড় মাঠের জনসভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে যত পিতা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে হতভাগ্য ফেলানীর পিতা। ভারতের বিএসএফ যখন অন্যায় ভাবে তার মেয়ের লাশ ঝুলিয়ে রাখে শেখ হাসিনা কিছুই করতে পারেনি। শেখ হাসিনা কতটা জিম্মি কতটা পুতুল ছিল যে ভারত সরকার তাকে পরিচালিত করত। এতটাই পুতুল যে একটা খুনের বিচারও করতে পারেনি। শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা খাটিয়েছে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের ওপর। কিন্তু সেই শেখ হাসিনা কাঁটাতারের ওপারে ভারতে মোদির পায়ের তলায় গিয়ে বসে থাকতো। খুনি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে।’


তিনি আরও বলেন, খুনি হাসিনা বাংলাদেশের গুরুত্বপুর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। খুনি হাসিনা পুলিশ বাহিনীকে তার ক্ষমতার অপব্যবহারের টুল বানিয়েছে। বিজিবিকে বিএসএফ'র অনুগত বানিয়ে রেখেছে। সবগুলো অফিসকে জিম্মি করে রেখেছে। প্রত্যেক অফিসে টাকা দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। শেখ হাসিনার ভারত প্রীতির কারণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানায় সারজিস আলম।’


জনসভায় ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ ১৪ বছরেও আমি আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার বিচার পাইনি। আর্ন্তজাতিক আদালতে আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার বিচার দাবি করছি। আমার চোখের সামনে আমার মেয়েকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। আমার মেয়েকে হত্যাকারী অমিয় ঘোষের বিচার দাবি করছি।’


পরে সন্ধ্যার আগে জনসভা শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন