মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ফরহাদের পাশাপাশি কথা বলেন একই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। তাদের বক্তব্যগুলো নিচে তুলে ধরা হলো—
এস এম ফরহাদ বলেন—
আমরা সকাল থেকেই দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত রেসপন্সের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অংশগ্রহণ করেছে। সকাল থেকেই সারি সারি শিক্ষার্থীরা যার যার বুথে এসে ভোট দিচ্ছিল। আমরা সেটি উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে গিয়েছি।
এর মধ্যে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। অনেকগুলো অভিযোগ এসেছে, অনেকগুলো কনসার্ন ছিল যেগুলো আমরা জানিয়েছি।
আমি প্রথমে ধন্যবাদ জানাবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয় শিক্ষার্থী ভাইবোনদেরকে, যারা যার জায়গা থেকে কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ সময় দিয়ে এই ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। আপনাদের মতামত ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে আগামীর বাংলাদেশ কিরকম হতে পারে, কতটা স্বতঃস্ফূর্ত হতে পারে, মত–দ্বিমত একসাথে কিভাবে ডেমোক্রেটিক পরিবেশে থাকতে পারে— সেটি একটি উজ্জ্বল নজির স্থাপন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। সে জায়গা থেকে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষা জোটের পক্ষ থেকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
তার আগে ভোট গণনা এবং ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদেরকে বিনীত অনুরোধ করব, আপনারা যার যার জায়গা থেকে অপেক্ষায় থাকবেন। ফলাফল ঘোষণা এবং সামগ্রিক কাজ শেষে যার যার হলে এবং আবাসনে আমরা সন্তুষ্টি নিয়ে ফিরব ইনশাআল্লাহ।
যেসব অভিযোগ এবং কনসার্ন ছিল— প্রথমত, সকাল থেকে বলা হচ্ছিল কোন প্রার্থী বুথে ঢুকতে পারবে না। অর্থাৎ ভোট দেওয়া ছাড়া সেন্ট্রাল প্রার্থী অন্য কোন বুথে ঢুকতে পারবে না— এই নির্দেশনা নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের জানানো হচ্ছিল। আমরাও দুপুর পর্যন্ত ঢুকতে পারিনি। আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদ ভাই প্রত্যেকটা বুথে, প্রত্যেকটা সেন্টারে সকাল ৮টা থেকে ঢোকা শুরু করেছেন— এমনকি ভোট গ্রহণের আগেই। আমরা গেলে আটকানো হতো। ছাত্রদলের অন্যান্য প্রার্থীও নানা কেন্দ্রে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে।
অভিযোগ জানানোর পরে দেড়টার পর এসে নির্বাচন কমিশনের চিফ রিটার্নিং অফিসার ফোন দিয়ে জানালেন— “এতক্ষণ যা হয়েছে হয়েছে, এখন তোমরাও ঢুকতে পারবা।” এটা কি নাটক মঞ্চ? মানে, এতক্ষণ নিষেধ করবেন, তারপর দিনের অর্ধেক পার হওয়ার পর বলবেন ঢুকতে পারবো! এটা খুবই দুঃখজনক।
একুশে হলে দেখা গেছে পূর্ণাঙ্গ ব্যালটে ছাত্রদলের সকল প্রার্থীকে ভোট দিয়ে সেই ভোট ব্যালট বক্সে ঢোকানো হচ্ছিল। হাতে–নাতে ধরা পড়ার পর প্রশাসন সাময়িক ব্যবস্থা নিলেও ভয়াবহ জালিয়াতি ধামাচাপা দিতে তারা নাটক মঞ্চস্থ করেছে। রোকেয়া হলে হঠাৎ করে একজন শিক্ষার্থী বুথে ঢুকে এক মিনিটের বেশি থেকে বেরিয়ে এসে অভিযোগ তুলেছে। আমাদের দাবি ছিল— ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সাথে সাথে দোষীদের শনাক্ত করা হোক। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ দেওয়া হয়নি, দুই–তিন ঘন্টা ঘোরানোর পরও। এইভাবে প্রশাসন বারবার সহায়তা করেছে তাদেরকে। নাটক মঞ্চস্থ করে দায় চাপানোর চেষ্টা করেছে।
আরো দেখা গেছে— ইউল্যাবে সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কোন মিডিয়াকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, কোনো অবজারভার ঢুকতে পারেনি। ১০ জন পোলিং এজেন্টের মধ্যে ৬ জন ছাত্রদলের, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে সাংবাদিক ও অবজারভারদেরও আটকানো হয়েছে।
রোকেয়া হলে নারী শিক্ষকদের অপমান, লাঞ্ছনা পর্যন্ত করা হয়েছে। এটা লজ্জাজনক।
বিকালে আমরা দেখেছি ছাত্রদলের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে মিলে নানা কারচুপি ঢাকতে অশোভন আচরণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে হাততালি, আঙ্গুল তোলা, টেবিল চাপড়ে অশোভনভাবে কথা বলেছে। এটা ছাত্রলীগ যুগের কথা মনে করিয়ে দেয়।
আমরা আবারো দাবি করছি— সিসিটিভি ফুটেজ উন্মুক্ত করা হোক, অভিযোগ এলে সাথে সাথে দোষীকে গ্রেপ্তার করা হোক।
আরেকটি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে— বাইরে নাকি আমাদের লোকজন পাহারা দিচ্ছে। আসলে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের চারপাশে যুবদল–বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়টি পয়েন্টে অবস্থান করছে, সেলফি তুলছে— “একটা সিগনালের অপেক্ষায় আছি।” নীলক্ষেত, তুরাগসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক এনে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোন দলের হুমকি–ধমকি মানবে না। আমরা যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবো। অন্যায়কারী যেই হোক না কেন, তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
সাদিক কয়েম বলেন—
আমরা প্রথমে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি একজন সাংবাদিক আজকে তার পেশাদারী কাজ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমরা দোয়া করছি— আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন।
সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে আমাদের কোন ভোটাধিকার ছিল না। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আজকে আমরা রাজনীতি ফিরে পেয়েছি। আজকে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে এসে তাদের ভোট দিচ্ছে। আমরা সবাই সেলিব্রেট করছিলাম। কিন্তু সেই সাথে আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম, ডাকসু নির্বাচনকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদ ইতিমধ্যেই ঘটনা ব্যাখ্যা করেছেন।
আমরা দেখেছি ইউল্যাব সেন্টারে পোলিং এজেন্ট ও অবজারভারদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি প্রায় আড়াই ঘণ্টা। একুশে হল ও কেএস সেন্টারেও কারচুপি হয়েছে।
আমাদের অবস্থান পরিষ্কার— যারা নির্বাচন বানচাল করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। প্রশাসনকে অনুরোধ করবো দ্রুত সময়ে যারা জড়িত তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আওতায় আনা হোক।
আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীকে আহ্বান জানাবো— এই ডাকসু নির্বাচন জুলাই আকাঙ্ক্ষা পূরণের নির্বাচন হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের সহযোদ্ধা, জুলাই বিপ্লবের অংশ যারা ছিল, তারাই আজকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।
আমরা তাদের হুশিয়ার করছি— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জুলাই বিপ্লব শুরু করেছিল, খুনি হাসিনার পতন ঘটিয়েছিল। আবারও যদি কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, শিক্ষার্থীরা প্রতিহত করবে।