সিরিয়ার সামরিক পতন কেন ‘আশ্চর্যজনক’ নয়?

৩ সপ্তাহ আগে
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন ঘটেছে। দেশ ছেড়ে অজ্ঞাত গন্তব্যে পালিয়েছেন আসাদ। তবে তার কিংবা দেশটির সামরিক বাহিনীর এই পতন ‘আশ্চর্যজনক’ বা ‘অপ্রত্যাশিত’ ছিল না বলেই মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জেমস ডরসির মতে, সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর পতন নিয়ে একটি প্রশ্ন সব সময়ই ছিল, আর তা হলো- ‘কখন (পতন) হবে?’

 

তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের সহজভাবে দেখায় যে, আল-আসাদ সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন এবং সিরিয়ার সামরিক বাহিনী কতটা ভঙ্গুর ছিল।’ 

 

আরও পড়ুন: ‘সিরিয়া দীর্ঘজীবী হোক’, রাষ্ট্রীয় টিভিতে ঘোষণা বিদ্রোহীদের

 

মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক এই বিশেষজ্ঞের মতে, 

দেশ রক্ষা করার জন্য আপনার যদি একটি জাতীয় সামরিক বাহিনী না থাকে, তাহলে কার্যত দেশটি দখল করা ছাড়া এমন কিছু নেই যা ইরান বা রাশিয়া করতে পারত না।

 

সিরিয়ার যুদ্ধকে দেশটির নেতা ‘সন্ত্রাসবাদীদের’ অভিযানে রূপ দিয়েছিলেন উল্লেখ করে জেমস ডরসি বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে একটি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া করার যেকোনো প্রচেষ্টাকে ভেস্তে দিয়েছেন তিনি (আসাদ), যেখানে সিরিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার হতে পারত।’

 

তিনি আরও বলেন, 

লোকদের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হতো। এছাড়া নিয়মিত তাদের বেতন এবং সঠিকভাবে ক্ষতিপূরণও দেয়া হতো না। ফলে, প্রয়োজন পূরণ করেনি এমন একটি শাসনব্যবস্থার জন্য তারা যে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দেবেন না, তাতে সত্যিই অবাক হওয়ার কিছু নেই।

 

এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত এক ব্রিটিশ কর্ণেলের মতে, স্বজনপ্রীতির পরিপ্রেক্ষিতে সেনাদের নিয়োগ দিতো আসাদ সরকার। তাই দক্ষ সেনার বরাবরই অভাব ছিল বাহিনীতে। রুশ সেনাদের কাঁধে ভর করেই আগে বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ করে আসছিলেন তারা। 

 

আরও পড়ুন: আসাদ সরকারের পতন /৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবার সিরিয়া সীমান্ত অতিক্রম ইসরাইলি বাহিনীর

 

এমনকি, সাধারণ সেনাদের উন্নতির জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হতো না বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে ২০২০ সালে যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর করার পর থেকে নেতিয়ে পড়েছিল সিরিয়ার সশস্ত্র বাহিনী। তাই, আচমকা এই হামলার মুখে রুশ এবং হিজবুল্লাহর সেনাদের সাহায্যের অভাবে তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়ে।  

 

২০১৬ সালে বিদ্রোহীদের দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়া এবং ২০২০ সালের যুদ্ধবিরতি, সিরিয়ার প্রতি পরাশক্তিদের মনযোগ কমিয়ে এনেছে। এরমধ্যে, আসাদ সরকারের পরিকল্পনার অভাব এবং প্রশাসনের দুর্বলতা অনেক আগেই ভেতর থেকে ক্ষয় করে দিচ্ছিল আসাদ সরকারের গদি। তাই, আচমকা হামলার এই ধাক্কা সামলাতে পারেননি ২৪ বছর ক্ষমতায় থাকা বাশার আল-আসাদ। 

 

এদিকে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিতে দেশবাসীর উদ্দেশে নিজেদের প্রথম বিবৃতি সম্প্রচার করেছেন বিদ্রোহীরা। 

 

আরও পড়ুন: সিরিয়া /বাশার আল আসাদকে বহনকারী বিমান কি বিধ্বস্ত হয়েছে?

 

সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বেসামরিক পোশাক পরে রাষ্ট্রীয় টিভিতে এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘দামেস্ক শহর মুক্ত করা হয়েছে।’ 

 

ওই ব্যক্তি বলেন, 

অত্যাচারী বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করা হয়েছে। দামেস্কের কারাগার থেকে সব বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করি, আমাদের সব যোদ্ধা এবং নাগরিকরা সিরিয়া রাষ্ট্রের সম্পত্তি সংরক্ষণ করবে। সিরিয়া দীর্ঘজীবী হোক।

 

এর আগে, বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস) তাদের টেলিগ্রামে বলেছে, ‘একটি অন্ধকার যুগের সমাপ্তি হয়েছে এবং একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। স্বৈরাচার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ পালিয়েছেন। সিরিয়া মুক্ত হয়েছে।’

 

এইচটিএস আরও বলেছে, এখন একটি ‘নতুন সিরিয়া’ গড়ে তোলা হবে যেখানে ‘সবাই শান্তিতে বসবাস করবে এবং ন্যায়বিচারের জয় হবে।’ রয়টার্সের প্রতিবেদন মতে, রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করতে শুরু করেন বিদ্রোহীরা। এর মধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে পালান। সকালে সিনিয়র দুই সেনা কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বাশার আল-আসাদ দামেস্ক ছাড়লেও কোথায় গেছেন, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। 

 

আরও পড়ুন: দামেস্ক দখলের পর যা বললেন বিদ্রোহী নেতা আল জুলানি

 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, একটি ব্যক্তিগত বিমান দামেস্ক বিমানবন্দর ছেড়ে গেছে। বিমানটিতে সম্ভবত আসাদ রয়েছেন। বিমানটি ছাড়ার সময় সেখানে সরকারি সেনা উপস্থিত ছিল।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন