গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটির ৩০ বছরের মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নয়াদিল্লি নতুন করে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতায় যেতে চায়, যেখানে ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনীয়তা ও আধুনিক বাস্তবতা প্রতিফলিত থাকবে।
ভারতের সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ৩০ বছর আগে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি সম্প্রসারণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং নদী ব্যবস্থাপনার মতো বর্তমান চ্যালেঞ্জের সঙ্গে আর সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে ভারতের পানির চাহিদা আগের তুলনায় বহুগুণে বেড়ে গেছে। ফলে দিল্লি চায়, প্রতি বছর মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ফারাক্কা ব্যারাজ থেকে অতিরিক্ত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি নেয়ার সুযোগ পেতে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় অবস্থিত ফারাক্কা বাঁধ হওয়ায় এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের মতামতকেও গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্র। তবে এবার কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ সরকারও একই সুরে বলছে, বর্তমান প্রয়োজন মেটাতে পুরোনো চুক্তি যথেষ্ট নয়।
আরও পড়ুন: সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত নিয়ে রায় জানাল স্থায়ী সালিশি আদালত
গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের পর ১৯৯৬ সালে দুই দেশ ৩০ বছরের জন্য একটি সমঝোতায় পৌঁছায়। শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে ওই বছরের ডিসেম্বরে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
এর আওতায় জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি দুই দেশের মধ্যে নির্দিষ্ট ফর্মুলায় ভাগ হয়। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সময়কালে প্রতি দশ দিনে পর্যায়ক্রমে ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি বরাদ্দ দেয়া হয়।
তবে ভারত এখন এই শুষ্ক সময়কালেই নিজ দেশের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে চায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মাধ্যমে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার পানি কূটনীতিতে একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি করছে। সিন্ধু পানি চুক্তি কার্যত বাতিল করে দেয়ার পদক্ষেপের পর এটি এ অঞ্চলে ভারতের দ্বিতীয় বড় কূটনৈতিক চাল।
আরও পড়ুন: সিন্ধু পানি চুক্তি একতরফা স্থগিত করা যাবে না: বিশ্বব্যাংক
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ভারত যদি নতুন করে একতরফাভাবে চুক্তির কাঠামো ঠিক করে, তাহলে ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ ফারাক্কা বাঁধ চালু হওয়ার পর থেকেই পদ্মা নদীতে পানিপ্রবাহ কমে গিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মরুকরণের আশঙ্কা বাড়ছে। কৃষি, মৎস্য ও জীববৈচিত্র্যও এর নেতিবাচক প্রভাবের মুখে পড়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) আসন্ন বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচনায় আসবে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহল ইতোমধ্যেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে জানা গেছে।
]]>